আইএসের হাত থেকে বাঁচতে নিজের গায়ে আগুন দিলো কিশোরী

সশস্ত্র সুন্নিপন্থী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে নারীদের নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে একের পর এক। বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুরা জানাচ্ছে সেইসব ভয়াবহ নির্যাতনের কথা। সম্প্রতি এমনই এক ফাঁস হওয়া ঘটনা থেকে জানা গেছে, আইএস জিহাদিদের হাত থেকে বাঁচতে এক কিশোরী নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, যাতে তাকে কুৎসিত দেখায়।

এভাবেই খাঁচায় বন্দি করে নারীদের বিক্রি করা হচ্ছে

উল্লেখ্য, জার্মান চিকিৎসক জান ইলহান কিজিলহানের নেতৃত্বে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আইএসের নির্যাতনের শিকার প্রায় ১ হাজার ১০০ নারীকে জার্মানিতে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জার্মান সরকারের অর্থায়নে গত বছরের এপ্রিলে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ নারীদের একটি দলকে জার্মানিতে নিয়ে আসা হয়েছে। জার্মান চিকিৎসক কিজিলহান জানিয়েছেন, আইএসের হাতে যৌনদাসী হিসেবে থাকা ইয়াজিদি নারী ও মেয়েদের কাছ থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ঘটনার বিবরণ শুনেছেন তিনি। জেনেভাতে তিনি বলেন,‘এসব নারী ও মেয়েদের নরকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।’

গত বছর আগস্টে এক শরণার্থী ক্যাম্পের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন এই জার্মান চিকিৎসক। ক্যাম্পের এক মেয়ের শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ। এমনকি নাক ও কান পুড়ে গেছে। ওই মেয়েটির ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা শুনে শিউরে উঠেছেন তিনি। পালিয়ে আসার আগে আইএস যোদ্ধারা ওই মেয়ে ও তার বোনকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে।

নারী ও মেয়েদের যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করছে আইএস

চিকিৎসক কিজিলহান জানান, একদিন রাতে শরণার্থী ক্যাম্পে ঘুমানোর সময় ওই মেয়েটি স্বপ্ন দেখেন আইএস যোদ্ধারা ক্যাম্পের বাইরে চলে এসেছে। এ সময় আতঙ্কে মেয়েটি নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মেয়েটি মনে করেছিল, যদি সে দেখতে কুৎসিত হয় তাহলে আইএস তাকে অপহরণ করবে না,ধর্ষণও করবে না।

মেয়েটি বর্তমানে জার্মানির এক হাসপাতালে রয়েছে। বেশ কয়েকটি অপারেশন করা হয়েছে। তবে এখনও চামড়া ও হাড়ের ৩০ টি অপারেশন করতে হবে।

ওই প্রকল্পে যেসব নারী ও মেয়েদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদের বয়স ১৬-২০ বছর। সবয়েছে বয়স্ক নারীর বয়স ৪০ বছর। সবচেয়ে কম বয়সী মেয়ের বয়স মাত্র আট। জার্মান ডাক্তার কিজিলহান জানান, আইএসের হাতে ১০ মাস বন্দি থাকা অবস্থায় সেই ৮ বছর বয়সী মেয়েটিকে আটবার বিক্রি করা হয়। সে সময় মেয়েটিকে কয়েকশ বার ধর্ষণ করা হয়। কিজিলহান জানান, গত বছরে ২০টিরও বেশি আত্মহত্যার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা দেড় শতাধিক হবে।

noname

কিজিলহান জানান, বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। ধারণা করা হচ্ছে, আইএসের হাতে এখনও প্রায় ৪ হাজার নারী ও মেয়ে বন্দি আছেন। যেসব নারী ও মেয়েরা পালিয়ে আসতে পারছে তাদের জন্য ইরাকে কোনও ধরনের সহযোগিতার ব্যবস্থা নাই।

তিনি জানান, আইএস জিহাদিদের  ধর্ষণের শিকার হয়ে অনেক নারী গর্ভবর্তী হয়ে পড়েছেন।ইয়াজিদি সম্প্রদায়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের কোনও স্থান নেই। এসব নারীদের বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ইয়াজিদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আইএসের হামলাকে গণহত্যার সামিল বলে উল্লেখ করেছে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এএ/বিএ/