যুদ্ধবিরতির অবসান গাজাবাসীর জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’: জাতিসংঘ

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতি ছিল। শুক্রবার সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই রকেট ও বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় হামাস-ইসরায়েল একে অপরকে দোষারোপ করছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ মন্তব্য করে বলেছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পুনরায় শুরু হওয়া লড়াই যুদ্ধবিরতির অবসান গাজার জনগণের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

এ হামলার পর হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।

ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার বিবিসিকে বলেছেন, ‘নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষ গাজার জনগণের জন্য বিপর্যয়কর ও সর্বনাশা।’

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি হাসপাতাল থেকে বিবিসির নিউজ ডে প্রোগ্রামকে তিনি বলেন, ‘এখান থেকে ৫০ অথবা ১০০ মিটার দূরত্বে হামলা হয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স আছে, আমি ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাসের হাসপাতাল, যেটি গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এখানে শিশু ও যুদ্ধাহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছে। অনেক পরিবার কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের গদিতে-ফ্লোরে ঘুমাচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষতবিক্ষত ঢেউয়ের সঙ্গে আর মোকাবিলা করতে পারছে না এটি।’

তবে শুক্রবার সকালে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, হামাস ইসরায়েলে গুলি চালিয়েছে। তারা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে পুনরায় শত্রুতা শুরু করেছে।

আইডিএফের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘হামাস তাদের আটকে থাকা নারী ও শিশুদের মুক্তি না দিয়ে জিম্মিদের বিষয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছে।’

তবে হামাস পুনরায় যুদ্ধ শুরুর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলছে যে তারা ‘অন্য জিম্মিদের মুক্তির সব প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে।’

শুক্রবার সকালে ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় বিমান হামলা চালায়। যেখানে উত্তরে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের আগে কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে গিয়েছিল।

এদিকে গাজা উপত্যকা থেকে দক্ষিণ ইসরায়েলের দিকে ছোড়া রকেট ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দ্বারা মোকাবিলা করা হয়েছে।

গাজার যেসব মানুষ তাঁবুতে ঘুমাচ্ছেন, তারা বিবিসিকে বলেছেন যে তারা ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা আরও বলেন, হাসপাতালে খুব কম পানি, খাবার ও ওষুধ পৌঁছানো হচ্ছে।

নাসের হাসপাতালে থাকা মারওয়া সালেহ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যুদ্ধের শুরুতে তিনি গাজা শহর থেকে পালিয়ে খান ইউনিসের কাছে আশ্রয় নেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ও আমি বেসামরিক নাগরিক। এই যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি মরতে চাই না। আমি কাউকে হারাতে চাই না।’

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল অভিযান শুরু করার পর থেকে প্রায় ৬ হাজার শিশুসহ ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।