যিশুর জন্মস্থান বেথেলহেমে এবার ‘সবচেয়ে অনাড়ম্বর’ বড়দিন

সাধারণত বড়দিনে সবচেয়ে ব্যস্ত থাকে যিশু খ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথেলহেম। তবে এবারের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। চলমান গাজা যুদ্ধের প্রভাবে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি এ শহরে এবার পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীরা আসছেন না। এই উৎসবকে ঘিরে সব অগ্রিম বুকিং বাতিল করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। ফলে ব্যবসায়ীরা হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং স্যুভেনির শপগুলো বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর প্রকাশ করেছে।

বড়দিনের মাসখানেক আগেই বেথেলহেমে শুরু হয়ে যায় সাজসাজ রব। ঘর সাজানোর হরেক রকম বাহারি সাজসজ্জার জিনিসে ভরে ওঠে দোকানপাট। প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে গির্জা থেকে শুরু করে বাড়িঘর ও সড়ক। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে জড়ো হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনার্থীরাও। উৎসব উৎসব আমেজে মেতে থাকেন সবাই। তবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন নিয়ে বেথেলহেমে এবার এমন আনন্দঘন পরিবেশ চোখে পড়ছে না। চারপাশে থমথমে নীরবতা। যেন এক পরিত্যক্ত শহর। ফলে এবার বেথেলহেমে পালিত হতে যাচ্ছে যিশুর 'সবচেয়ে অনাড়ম্বর' বড়দিন।

বেথেলহেমের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যুদ্ধের আতঙ্কের মধ্যে সেখানে কেউই আসছে না। চার প্রজন্ম ধরে বেথেলহেমে বসবাসকারী এক পরিবারের সদস্য জোয়ি কানাভাতি। তিনি আলেক্সান্ডার হোটেলের মালিক। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনও অতিথি নেই। এমনকি একজনও না। এটি আমার দেখা সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ বড়দিন। কোনও ক্রিসমাস ট্রি নেই, কোনও আনন্দ নেই, বড়দিনের কোনও আবহও নেই।’

জেরুজালেমের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত বেথেলহেম। শহরটির অর্থনীতি পর্যটনশিল্পের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস মতে, ‘চার্চ অব দ্য নেটিভিটি’ হলো সেই স্থান, যেখানে যিশুর জন্ম হয়েছিল। সেটি দেখতে বেথেলহেমে ভিড় জমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শনার্থীরা।

কানাভাতি বলেছেন, ৭ অক্টোবরের আগে বড়দিন উপলক্ষে হোটেলটি অগ্রিম বুক হয়েছিল। এমনকি ক্রেতাদের এমন চাপ ছিল যে তাদের সাহায্য করতে তাকে শহরের অন্য কোথাও রুম খুঁজতে হয়েছিল। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আগামী বছরের সব অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। 

কানাভাতি বলেছিলেন, ‘আমরা ইমেইলে একের পর এক শুধু বুকিং বাতিলের অনুরোধ পেয়েছি।’

এরপর তিনি রয়টার্সের প্রতিনিধিদের তার হোটেলটিতে নিয়ে যান। সেখানে খালি ঘরের দরজা খুলে নির্জন ডাইনিং রুমটি দেখান।

হতাশা নিয়ে কানাভাতি বলেন, ‘একটি প্যাকেজের আওতায় আমাদের এখানে প্রতি রাতে কমপক্ষে ১২০ জন লোক রাতের খাবার খেতো। সেই কোলাহল, সেই মানুষজন। এবার কিছুই নেই। বড়দিনের নাস্তা নেই, নৈশভোজ নেই, বুফেও নেই।’

পারিবারিক দোকানে ধর্মীয় স্মারক বিক্রি করেন রনি তাবাশ। সময় কাটানোর জন্য দোকানের তাকগুলো পরিষ্কার করছিলেন তিনি। রয়টার্সকে বলেছেন, প্রায় দুই মাস ধরে কোনও পুণ্যার্থী, কোনও পর্যটক নেই। আশাহীনতাকে ঢেকে রাখতে দোকান খোলা রেখেছেন। আমরা চাই সবকিছু ফিরে আসুক, স্বাভাবিক জীবনের মতো।

আলা সালেমাহ নামের এক রেস্তোরাঁ মালিক বলেছেন, তাদের ব্যবসা চলছে সামর্থ্যের মাত্র ১০ বা ১৫ শতাংশ। এখন শুধু স্থানীয় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর খাবার সরবরাহ হচ্ছে, কোনও বিদেশি ভ্রমণকারী নেই।

কর্মীদের কাজ প্রয়োজন, তাই রেস্তোরাঁ চালু রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কর্মী রয়েছে। তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য আমি কোথা থেকে অর্থ দেবো?

তিনি আরও বলেন, শান্তির জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। বেথেলহেম হলো সেই শহর, যেখানে শান্তির জন্ম হয়েছিল। শান্তির বার্তা হওয়া উচিত শহরটির, যে শান্তির বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।