গাজা ইস্যুতে মিসরের প্রস্তাব নিয়ে যা বললো হামাস-ইসরায়েল

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) যে নতুন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মিসর দিয়েছিল তা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে গাজা উপত্যকায় ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয় বলে সাফ জানিয়েছে তারা। মিসরের দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোবলের কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল।

তবে এ আলোচনার বিষয়ে ওই দুই সূত্র যে তথ্য রয়টার্সকে দিয়েছেন সেসব কথা পৃথকভাবে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ গ্রুপের দুই কর্মকর্তা অস্বীকার করেছেন।

ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের জেরে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সোমবার একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল মিসর।

প্রস্তাবটির সঙ্গে পরিচিত এক মিসরীয় কর্মকর্তা এবং এক ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, ওই পরিকল্পনায় গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য পর্যায়ক্রমে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রশাসনের জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি ফিলিস্তিনি সরকার গঠনের এবং সর্বশেষ গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের প্রস্তাব রাখা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিসরীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রস্তাবটি নিয়ে উপসাগরীয় দেশ কাতারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সেটি ইসরায়েল, হামাস, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় সরকারকে উপস্থাপন করা হয়েছে। মিসর এবং কাতার উভয়ই ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার কাজ করছে।

প্রস্তাবটি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন থামাতে একটি নতুন কূটনীতির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। তবে মিসরের নতুন এ প্রচেষ্টাকে বিশ্ববাসী স্বাগত জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।

প্রস্তাবটি নিয়ে হামাস যা বললো:

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-রিশক বলেছিলেন, ‘আগ্রাসন সম্পূর্ণ বন্ধ না করে কোনও আলোচনা হতে পারে না।’

এ প্রস্তাব নিয়ে পৃথক আলোচনা করার সময় মিসর হামাসকে একটি নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং আশ্বস্ত করেছিল, হামাসের কোনও সদস্যকে তাড়া করা বা বিচারের আওতায় আনা হবে না। তবে ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি জিম্মি মুক্তি ছাড়া আর অন্য কোনও বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের কাছে এখনও ১০০ জনেরও বেশি জিম্মি রয়েছেন।

সম্প্রতি কায়রোতে সফরকারী হামাসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা মিসরীয় কর্মকর্তাদের বলেছি, আমাদের জনগণের কাছে অবশ্যই সাহায্য পৌঁছাতে হবে, সাহায্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং সেগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ গাজার সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ এবং সহযোগিতা বাড়ানো হলেই জিম্মি বিনিময় নিয়ে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত।’

ইসলামিক জিহাদ যা বললো:

গাজায় ইসলামিক জিহাদের হাতেও ইসরায়েলের কিছু জিম্মি রয়েছেন। গোষ্ঠীটির নেতা জিয়াদ আল-নাখালার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে মিসরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্দিবিনিময় প্রস্তাব এবং অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় করতে কায়রোতে অবস্থান করছেন।

ইসলামিক জিহাদের এক কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, যেকোনও বন্দিবিনিময় অবশ্যই ‘সবার জন্য’ নীতির ভিত্তিতে হতে হবে। এর অর্থ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করার বিনিময়ে গাজায় হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তি।

চলমান এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, ইসরায়েলি কারাগারে ৫ হাজার ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি ছিল। তবে ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীর এবং গাজায় আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েল গ্রেফতার করায় বন্দিদের এ সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০ হাজারে পৌঁছেছে।

যা বললো ইসরায়েল:

মিসরের নতুন এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে তার লিকুদ পার্টির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শুরু হওয়া এ আক্রমণ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইসরায়েল। ওই হামলায় হামাসের হাতে ইসরায়েলের এক হাজার ২০০ নাগরিক নিহত এবং প্রায় ২৪০ জন জিম্মি হন।

নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যের পরই গাজায় হামলা আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শতাধিক নিহত মানুষ মাগাজি শরণার্থী শিবিরের।