ইসরায়েলি নিশানায় হামলা বাড়ানোর হুমকি হুথিদের

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না হলে আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনগুলোতে তারা ইসরায়েলে তাদের লক্ষ্যবস্তুর পরিসর বাড়াবে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) নিশ্চিত করেছেন যে, তারা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে উৎক্ষেপণ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা প্রতিহত করেছে। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাইরেন বেজে উঠেছিল। 

গাজায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে হুথি গোষ্ঠী বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় চার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে আলোচনা স্থগিত হওয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহের আপেক্ষিক শান্তি ভেঙে পড়েছে। 

সারিয়া টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘গাজায় আমাদের মানুষের ওপর সংঘটিত সব গণহত্যা দেখেও ইয়েমেনের নেতৃত্ব, জনগণ ও সেনাবাহিনী নিশ্চুপ থাকবে না।’ 

হুথি গোষ্ঠী ইসরায়েলে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে তারা আগামী দিনগুলোতে আরও ব্যাপক হামলা চালাবে বলে জানিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে, যাতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে। 

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছর ধরে ইরানের সমর্থন পেয়ে আসছে। তারা ইসরায়েল ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বারবার হামলা চালিয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে তারা ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্রটি ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাইরেন বেজে উঠলে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। 

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা হুথি গোষ্ঠীর হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে এবং যেকোনও হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামলা চালানো হবে যতক্ষণ না হামাসের সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা যায়। 

গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও হুথিদের প্রতিশোধমূলক হামলার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই সংঘাতের কোনও সামরিক সমাধান নেই। শুধু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান সম্ভব।’ 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে।’ 

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ, পানি ও ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং হাসপাতালগুলো রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। 

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় এ পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই শিশু ও নারী। আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।