সিরিয়ার রাজধানীর কাছে দ্বিতীয় দিনেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ 

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে ড্রুজ-অধ্যুষিত এলাকায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে। 

বুধবার সকালে দামেস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে আশরাফিয়া সাহনায়া শহরে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের একটি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে হামলার পর সংঘর্ষ শুরু হয়। এর একদিন আগে দামেস্কের ড্রুজ-অধ্যুষিত জারামানা শহরেও হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হন বলে ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুধবার সকাল পর্যন্ত গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষ কবলিত এলাকার সড়কগুলো বন্ধ করে দিয়ে বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন,  ইসরায়েলি বাহিনী দামেস্কের দক্ষিণে ড্রুজ জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন একটি ‘চরমপন্থি গ্রুপ’-কে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। 

ইসরায়েলের আরেকটি হামলায় দামেস্কের বাইরে সিরিয়ার এক নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক প্রধান ড্রুজদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ না হলে সিরিয়ার সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। 

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা দক্ষিণ সিরিয়ার ড্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করবে। তবে সিরিয়ার ড্রুজ নেতারা বলেছেন, তারা এমন কোনও সহায়তা চাননি। 

গত এক মাস ধরে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ উত্তেজনা মোকাবিলা করছে। বাশার আল-আসাদের পতন হওয়ার পর উপকূলীয় লাতাকিয়া গভর্নরেটে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার জেরে সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডে অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। 

এসওএইচআর-এর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার জারামানায় হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। 

সিরিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ ড্রুজ জনগোষ্ঠীর লোক মূলত সুয়াইদা গভর্নরেট ও দামেস্কের দক্ষিণের ছোট শহরগুলোতে বাস করেন। গত ৮ ডিসেম্বর আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর নতুন কর্তৃপক্ষ ও ড্রুজ নেতারা সুয়াইদাকে পুরোপুরি সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করছেন। 

তবে ড্রুজ নেতারা দামেস্ক থেকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন চাইছেন। এ কারণে আলোচনা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। 

মঙ্গলবার জারামানায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় একটি ভুয়া অডিও রেকর্ডিংকে কেন্দ্র করে, যাতে একজন ড্রুজ ধর্মগুরুকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করতে শোনা যায়। পরে ওই ধর্মগুরু মারওয়ান কিওয়ান একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এই রেকর্ডিং তার নয় এবং এটি সিরিয়ার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য তৈরি করা হয়েছে। 

জারামানায় সংঘর্ষ বন্ধ করতে সম্প্রদায়ের নেতারা ও সরকারের প্রতিনিধিরা একটি সমঝোতা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর আশরাফিয়া সাহনায়ায় ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। 

সুয়াইদা মিলিটারি কাউন্সিলের প্রধান তারেক আল-শৌফি বলেন, জারামানায় একটি গণহত্যা হয়েছে, আশরাফিয়া সাহনায়াকে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা সেখানে হামলা চালাচ্ছে। 

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অপরাধীদের সঙ্গে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে এবং যারা সিরিয়ার নিরাপত্তা ও জনগণকে লক্ষ্য করবে তাদের বিরুদ্ধে লৌহমুষ্টি প্রয়োগ করা হবে।

সিরিয়ার নবগঠিত কর্তৃপক্ষ আর্থিক সংকট ও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে। দেশটির বিশাল গ্রামীণ এলাকায় অসংখ্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন হামলা প্রতিরোধে নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।