গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ অব্যাহত থাকলেও দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের যুদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি স্বাক্ষর করেছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধ করে হামাসের কাছে আটক থাকা বাকি ৫৯ জন জিম্মি মুক্তির জন্য চুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গত ১৮ মাস ধরে হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করাই ছিল ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি ও ৩০ জনের বেশি জিম্মি ফিরে আসায় অনেকের মনে আশা জেগেছিল যে যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হতে পারে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও যুদ্ধ শুরু করলে সেই আশা ভেঙে যায়।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতোম বলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি যে নেতানিয়াহুকে শুধু নিজের স্বার্থই ভাবায়। তার অগ্রাধিকার তালিকায় সরকারকে স্থিতিশীল রাখাই প্রধান, জিম্মিদের মুক্তি নয়।
এপ্রিলের শুরুতে প্রথম যে খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়, তাতে ১ হাজার বিমানবাহিনীর রিজার্ভ ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য স্বাক্ষর করেন। তারা লিখেছেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এর কোনও ঘোষিত লক্ষ্যই অর্জন করতে পারবে না, বরং জিম্মিদের মৃত্যু ডেকে আনবে।
এরপর থেকে সামরিক বাহিনীর প্রায় সব শাখা থেকেই এমন চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ১২ হাজারের বেশি স্বাক্ষর জমা পড়েছে। গত ৭ অক্টোবরের পর হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকে সাড়া দিলেও এখন অনেকেই ডিউটিতে যেতে অস্বীকার করছেন। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভ উপস্থিতি ৫০-৬০ শতাংশে নেমে এসেছে।
জেরুজালেমের এক উদ্যানে কথা হয় ইওয়াব (ছদ্মনাম) নামের এক পদাতিক রিজার্ভ সেনার সঙ্গে। গত গ্রীষ্মে গাজায় ডিউটি করা ইওয়াব বলেন, তিনি আর কখনও যুদ্ধে যাবেন না। আমার মনে হয়েছিল আমি আমার ভাইবোনদের সাহায্য করতে যাচ্ছি। কিন্তু এখন আমি আর সেটা মনে করি না।
সমালোচকরা বলছেন, যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী বলে দাবি করা ইসরায়েলের তত কঠিন হয়ে পড়ছে। বাম ঘরানা ইসরায়েলি দৈনিক পত্রিকা হারেৎজ-এ অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আমিরাম লেভিন লিখেছেন, সেনাদের এখন আদেশ অমান্য করার কথা ভাবা উচিত।
নেতানিয়াহু প্রতিবাদকারীদের ‘প্রচারণা মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এরা ‘অল্প কিছু প্রান্তিক ব্যক্তি’। কিন্তু জরিপ বলছে, জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে জনমত বাড়ছে।
তেল আবিবে এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। সেখানে জিম্মিদের ছবি নিয়ে প্রতিবাদ করা হয়, আবার কেউ কেউ গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি হাতে রাস্তায় বসে থাকেন। গত ২০ এপ্রিল পুলিশ গাজার শিশুদের ছবি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেয়।
এদিকে নেতানিয়াহু হামাসকে পরাজিত করার দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে, সামরিক চাপই জিম্মিদের বাড়ি ফেরার একমাত্র উপায়।