গাজা যুদ্ধ ও ত্রাণ সহায়তার নতুন পর্যায় নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন নেতানিয়াহু

গাজায় হামলা আরও বিস্তৃত করার বিষয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রবিবার (৪ মে) দুইজন সরকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা আবার শুরু করার বিষয়েও আলোচনা হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, তিনি গাজা যুদ্ধের ‘পরবর্তী ধাপ’ নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাকে আহ্বান করছেন।

ওই ভিডিওটি ইয়েমেন থেকে ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিয়নের কাছাকাছি পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রকাশ করা হয়।

মন্ত্রীরা বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে রবিবার সেনাপ্রধান জানান, গাজা অভিযান বিস্তৃত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই হাজার হাজার রিজার্ভ সদস্যকে তলবের আদেশ পাঠাতে শুরু করেছে।

সেনাবাহিনীর বিবৃতি অনুসারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জমির বলেন, ‘আমরা চাপ বাড়াচ্ছি, আমাদের জনগণকে (জিম্মিদের) ফিরিয়ে আনার এবং হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যে।’

ইসরায়েল ইতিমধ্যে গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে জারি থাকা ত্রাণ অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে।

মন্ত্রীদের দাবি, হামাস সাধারণ জনগণের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ জব্দ করে নিজেদের যোদ্ধাদের জন্য ব্যবহার করছে বা তা বিক্রি করছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একইসাথে গাজায় খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষের হুমকি বেড়ে চলেছে।

রবিবার জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম (এইচসিটি) জানায়, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাদের কাছে অনুমতি চাইছে যাতে তারা ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েলি হাবের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ করতে পারে। যদি সরকার সীমান্ত ক্রসিং আবার খুলতে সম্মত হয়।’

এক বিবৃতিতে এইচসিটি বলেছে, ‘এমন পরিকল্পনা বিপজ্জনক এবং মূল মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী। এটি জীবন-রক্ষাকারী উপকরণকে নিয়ন্ত্রণে রেখে চাপ প্রয়োগের একটি সামরিক কৌশল হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে।’

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'কান' জানিয়েছে, একটি নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবিষ্যতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরিবর্তে বিদেশি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এটি করা হবে গাজার দক্ষিণের রাফাহ অঞ্চলে নির্ধারিত একটি নতুন মানবিক জোনে। তার আগে নিরাপত্তা যাচাই শেষে বেসামরিক লোকদের স্থানান্তর করা হবে।  

গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের নেতৃত্ব ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু রাজনীতিবিদ গাজা দখলের পক্ষে অবস্থান নিলেও, সেনাবাহিনী সেই আহ্বানের বিরোধিতা করেছে। মার্চে দায়িত্ব নেওয়া আইয়াল জমিরও তার পূর্বসূরি এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অবস্থানই বজায় রেখেছেন।

গত মাসে মন্ত্রীদের তিনি জানান, ইসরায়েলি সেনারা ত্রাণ বিতরণ করবে না এবং গাজায় দুর্ভিক্ষ হতে দেবে না। এতে অবশ্য ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রীসহ অনেকে ক্ষুব্ধ হন। কারণ তারা আরও কঠোর পদক্ষেপের আশায় ছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এর জবাবে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে গাজা উপত্যকা।