ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশটি স্থানীয় কিছু ‘সশস্ত্র অপরাধী গোষ্ঠীকে’ সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু। এটিই ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এমন তৎপরতার প্রকাশ্য স্বীকৃতি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমরা গাজার কিছু শক্তিশালী গোত্রকে সক্রিয় করেছি।
এই বিষয় নিয়ে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবিগদর লিবারম্যানের অভিযোগের কয়েক ঘণ্টা পরেই এই স্বীকারোক্তি দিলেন নেতানিয়াহু।
তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর ভাষ্য, এই গোষ্ঠীগুলো শুধু অপরাধমূলক তৎপরতায়ই জড়িত নয়, তারা ত্রাণ ট্রাক থেকে খাদ্য ও ওষুধ লুট করছে এমনকি মানুষকে আক্রমণও করছে। গাজার ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্যে এ ধরনের গোষ্ঠীর উত্থান আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
নেতানিয়াহু যেসব গোষ্ঠীর কথা বলছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘পপুলার ফোর্সেস’। এই গোষ্ঠীটি রাফাহর স্থানীয় নেতা ইয়াসের আবু শাবাবের নেতৃত্বে গঠিত বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
গত মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হ্যারেৎজ জানিয়েছিল, গাজায় প্রায় ১০০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি নিয়ে ‘অ্যান্টি-টেরর সার্ভিস’ নামে একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে, যাদের কার্যক্রমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মৌন সমর্থন রয়েছে।
এই গোষ্ঠী সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর নতুন বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তায় সহায়তা করছে। জিএইচএফ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মদদপুষ্ট একটি বিতর্কিত সংগঠন, যাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিএইচএফ পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে চারবার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ৩১টি এবং গাজা সিটির আল-আহলি ও আল-শিফা হাসপাতালে আরও ২১টি মৃতদেহ আনা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজন সাংবাদিকও রয়েছেন, যারা আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান।
গাজা শহরের বাসিন্দা ফাদি আল-হিন্দি বলেন, আমি আমার তাঁবু থেকে বের হয়ে দেখি আল-শিফা হাসপাতালের পাশে এক ব্যক্তি সাইকেলে চড়ছিলেন, বিস্ফোরণে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। চারপাশে শুধু রক্ত আর মানুষের কান্না।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার সাবেক মুখপাত্র ক্রিস গুনেস বলেন, জিএইচএফ-এর কার্যক্রম গাজাকে এক ‘মানব জবাইখানায়’ পরিণত করেছে। শত শত মানুষকে খাঁচায় ঢুকিয়ে পশুর মতো হত্যা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম একদিনের জন্য স্থগিত করে। বৃহস্পতিবার তারা জানায়, রাফাহ এলাকায় দুটি বিতরণ কেন্দ্র আবার খুলবে, তবে কখন ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত বলেছেন, ইসরায়েলি বিরোধী দল বলছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে সরকারের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। একতরফাভাবে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র দিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার।
অন্যদিকে, হামাস নেতা খালিল আল-হাইয়া এক রেকর্ডকৃত ভাষণে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেনি। বরং যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের নিশ্চয়তার জন্য কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে এখনও আলোচনায় আগ্রহী এবং চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এর আগে মার্চ মাসে এক অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল আবার গাজায় পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে। এরপর থেকে মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। নেতানিয়াহুর নতুন স্বীকারোক্তিতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।