ইরানে কুকুর হাঁটানো নিষেধাজ্ঞা আবারও কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানী তেহরানের বাইরেও অন্তত ১৮টি শহরে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। নতুন আদেশ অনুযায়ী, কুকুর নিয়ে জনসমক্ষে হাঁটাচলা কিংবা গাড়িতে পরিবহন উভয়েই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা মূলত ২০১৯ সালে তেহরানে চালু করা পুলিশি নির্দেশনার সম্প্রসারিত রূপ। সম্প্রতি ইস্পাহান, কেরমান ও ইলাম শহরে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইলাম-এর এক কর্মকর্তা জানান, যারা এই নিষেধাজ্ঞা ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব বিধিনিষেধ কার্যকরে এক ধরনের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে এখনও অনেক কুকুর মালিক প্রকাশ্যে পোষা প্রাণী নিয়ে হাঁটতে দেখা যায়।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানে কুকুর মালিকানা অশুদ্ধ ও পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কুকুরকে ‘নাজিস’ বা অপবিত্র বলে মনে করা হয়।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কুকুর পালনকে অবাঞ্ছিত অভ্যাস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেবল চারণ, শিকার বা নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত কুকুরকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালে ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি দিকনির্দেশনা মন্ত্রণালয় পোষা প্রাণী ও সম্পর্কিত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে। এমনকি ২০১৪ সালে সংসদে একটি বিল পেশ করা হয়, যেখানে প্রকাশ্যে কুকুর হাঁটানোর জন্য জরিমানা ও বেত্রাঘাতের প্রস্তাব ছিল—যদিও বিলটি পরে পাস হয়নি।
সব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানে কুকুর মালিকানা ধীরে ধীরে বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। কুকুর পোষা, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘন, গোপন পার্টিতে অংশ নেওয়া কিংবা মদ্যপানের মতো কার্যকলাপ অনেকের কাছে ইসলামি শাসনের বিরুদ্ধে এক ধরনের নীরব প্রতিবাদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় এক প্রসিকিউটর আব্বাস নাজাফি বলেন, কুকুর হাঁটানো জনস্বাস্থ্য, শান্তি ও সামাজিক স্বস্তির জন্য হুমকি।
তবে সমালোচকরা বলছেন, সহিংস অপরাধ বাড়তে থাকা এই সময়ে পুলিশের উচিত মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়, বরং প্রকৃত জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া।
বর্তমানে অনেক কুকুর মালিক রাতে নির্জন স্থানে কুকুর হাঁটাতে যাচ্ছেন অথবা গাড়িতে ঘোরানোর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
জাতীয় পর্যায়ে কুকুর মালিকানার ওপর সরাসরি কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও স্থানীয়ভাবে বারবার আইন জারি করে পুলিশ তা প্রয়োগ করে আসছে।