গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৪১ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের  গাজা উপত্যকায় রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সহায়তা কেন্দ্রের আশপাশে মারা যান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মধ্য গাজার আল-আওদা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নেতসারিম করিডোরের কাছের এক জিএইচএফ সাইটে পৌঁছাতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে তিনজন নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকেই। রাফাহর দক্ষিণাঞ্চলে একটি সহায়তা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে আরও দুজন প্রাণ হারান।

গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাতজন নিহত হন বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কর্মীরা। মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে বিমান হামলায় প্রাণ হারান আরও ১১ জন। বাকিরা নিহত হয়েছেন দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন স্থানে চালানো পৃথক হামলায়।

এই হামলা নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

জিএইচএফ গত মে মাসের শেষ দিকে গাজায় খাদ্য বিতরণ শুরু করে। এর আগে প্রায় তিন মাস ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল সম্পূর্ণ অবরোধ বজায় রেখেছিল। সহায়তা পৌঁছানোর এই নতুন পদ্ধতির আওতায় প্রায় প্রতিদিনই গুলিবর্ষণে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিএইচএফ কাজ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সহায়তা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় বা তার আশপাশে অন্তত ৩০০ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ বলেন, এটি সহায়তা নয়, এটি হচ্ছে দারিদ্র্যপীড়িত ও ক্ষুধার্ত জনগণকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা। এর ওপর নজর রাখছে দখলদার বাহিনীর যুদ্ধবিমান।

তিনি রবিবার এক্স-এ লিখেছেন, যেখানে গুলি চলে, সেখানে সহায়তা নয়, কেবল অপমানই বিতরণ করা হয়।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েল ও তার মিত্রদের সহায়তায় গঠিত নতুন সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ, মানবিক নিরপেক্ষতার নীতিমালার লঙ্ঘন এবং প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপ্রতুল।

অন্যদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক সহায়তা সংস্থা কোগাট জানিয়েছে, তারা গত এক সপ্তাহে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে গাজায় ২৯২টি সহায়তা ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য ও ময়দাও ছিল।

তারা বলেছে, সহায়তা যেন হামাসের হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করেই গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল গাজা জনগণের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে ১ হাজার ২০০ জন মানুষ হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েল এটিকে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার দুই কোটিরও বেশি মানুষ এখন ভয়াবহ মানবিক সংকটে রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত ও অপুষ্টিতে ভুগছেন।