তেল আবিব ও হাইফায় ইরানের হামলা, ‘নতুন কৌশল’ নিয়ে তেহরানের গর্ব

ইসরায়েলের তেল আবিব ও বন্দরনগরী হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চালিয়েছে ইরান। সোমবার (১৬ জুন) ভোররাতে তেল আবিবের আকাশে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের দৃশ্য দেখা যায় এবং জেরুজালেমেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হামলায় ৫ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে চালানো আগাম হামলার পাল্টা জবাব হিসেবেই তেহরান এই আঘাত হানে।

জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, সর্বশেষ ইরানি হামলায় অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ইরানি হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে।  হামলায় আরও অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছে।

হাইফায় ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চলছে। জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, সেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

তেল আবিবের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই এলাকার মাত্র কয়েকশ মিটার দূরেই মার্কিন দূতাবাসের একটি শাখা অবস্থিত। দূতাবাস ভবনে কিছু ক্ষতি হলেও কেউ আহত হয়নি বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

তেল আবিবে বসবাসকারী ৩১ বছর বয়সী গাইডো টেটেলবাউম বলেন, ‘প্রতিবারের মতোই আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা উড়ে যায়। শান্ত হওয়ার পর যখন অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে দেখি কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো অনিশ্চয়তা। এই হামলা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আরও খারাপও হতে পারে।’

এদিকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় তারা এমন একটি ‘নতুন কৌশল’ ব্যবহার করেছে। এর ফলে ইসরায়েলের বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে।

আইআরজিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই অভিযানে ব্যবহৃত উদ্যোগ ও সক্ষমতাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির সর্বোচ্চ সমর্থন এবং আধুনিকতম প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সত্ত্বেও, ইসরায়েলের অধিকৃত ভূখণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।’

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি । তবে তারা বারবার বলে আসছে, তাদের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ সুরক্ষিত নয় এবং সামনে আরও কঠিন সময় আসছে।

ইরানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২২৪ জন। নিহতদের ৯০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সোমবার সকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা আবারও ইরানের বিপ্লবী গার্ড ও সামরিক বাহিনীর কমান্ড সেন্টারগুলোতে হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্প ইসরায়েলের আক্রমণকে প্রশংসা করলেও ইরানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছে। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হলে ইরানকে এর মূল্য দিতে হবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, তারা ইরান থেকে ছোড়া ইসরায়েলগামী ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংসে সহায়তা করেছে।