যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও ইরান: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইসরায়েল ও ইরান একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা ১২ দিন ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। সোমবার (২৩ জুন) নিজের  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি এই ঘোষণা দেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে ট্রাম্প লেখেন, “সবকিছু ঠিকভাবে কাজ করলে, যা হবেই, আমি ইসরায়েল ও ইরান—এই দুই দেশকে অভিনন্দন জানাই—তাদের ধৈর্য, সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য, যা এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ শেষ করতে সাহায্য করেছে।”

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও এক ইরানি কর্মকর্তা আগেই নিশ্চিত করেছিলেন যে তেহরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, যদি ইসরায়েল তার হামলা বন্ধ না করে, তাহলে কোনও যুদ্ধবিরতি হবে না।

আরাঘচি মঙ্গলবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “যদি ইসরায়েল তেহরানের সময় সকাল ৪টার মধ্যে ইরানি জনগণের ওপর অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে ইরান আর পাল্টা হামলা চালাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।”

হোয়াইট হাউজের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে এই সমঝোতা করিয়েছেন এবং ইসরায়েল সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েল ও ইরান তাদের চলমান মিশন সম্পন্ন করার জন্য কিছু সময় পাবে, তারপর ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

এই যুদ্ধে তেহরান থেকে লাখ লাখ মানুষ পালিয়ে যায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অভিযোগ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে তাদের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নেই, তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “আমরা চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতেই পারি—বিশ্বের কোনও নেতাই তা থামাতে পারবে না।”

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুররহমান আল থানি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তেহরানের সম্মতি আদায় করেন বলে মঙ্গলবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা।

হোয়াইট হাউজের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরানিদের সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন। ইরানের জাতিসংঘ মিশন বা ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাস থেকে রয়টার্সের পৃথক অনুরোধে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে, তিনজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইঙ্গিত দেন যে ইসরায়েল শিগগিরই তাদের ইরান অভিযান শেষ করতে চায় এবং তারা এই বার্তা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে এক বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু তার মন্ত্রীদের বলেছিলেন, প্রকাশ্যে কোনও বক্তব্য না দিতে।  

বাজারে এই খবরের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যুদ্ধবিরতির খবরে সরবরাহ বিঘ্নের আশঙ্কা কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার ভোরে এশিয়ার বাজারে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।