ইসরায়েলের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ রফতানি বৈধ: ব্রিটিশ আদালত

যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, ইসরায়েলের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ রফতানির সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকলেও সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত ৭২ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারপতি স্টিফেন মেলস ও ক্যারেন স্টেইন বলেন, এই মামলার বিষয় কেবল যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ নয়, বরং এটি একটি বেশি সংবেদনশীল ও রাজনৈতিক প্রশ্ন। যদি কিছু যন্ত্রাংশ ইসরায়েলের কাছে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হয় তাহলে যুক্তরাজ্য একটি বহুপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াবে কিনা, বিষয়টিও বিবেচ্য ছিল।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, আমাদের সংবিধানে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে নির্বাহী বিভাগের ওপর বর্তায়। যারা পার্লামেন্ট ও জনগণের কাছে জবাবদিহি করে। আদালতের পক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া উপযুক্ত নয়।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য লকহিড মার্টিনের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছে। এই প্রকল্পে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একসঙ্গে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করে।

পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা আল-হক গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের  বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ রফতানি আন্তর্জাতিক অপরাধে সহায়তা করার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

গত মে মাসে মামলার শুনানিতে আল-হকের আইনজীবীরা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

একই সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছিলেন, রফতানি স্থগিত করা হলে পুরো এফ-৩৫ প্রকল্পে প্রভাব পড়বে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

রায় ঘোষণার পর আল-হকের নির্বাহী পরিচালক শাওয়ান জাবারিন বলেন, আজকের রায় সত্ত্বেও, এই মামলাটি ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠকে সামনে এনেছে এবং গণসমর্থন জুগিয়েছে। এটি কেবল শুরু।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সরকারের অস্ত্র রফতানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধে সহায়তার বিষয়টি উন্মোচন করে নাগরিক সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা যুক্তরাজ্যে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ৩৫০টি রফতানি লাইসেন্সের মধ্যে প্রায় ৩০টি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ব্রিটিশ নির্মিত এফ-৩৫ এর রিফুয়েলিং প্রোব, লেজার টার্গেটিং সিস্টেম, টায়ার ও ইজেক্টর সিট এর আওতায় ছিল না।

বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালও মামলায় আল-হকের পক্ষে যুক্ত হয়। তারা জানায়, যুক্তরাজ্যের আংশিক নিষেধাজ্ঞা কার্যত অকার্যকর, কারণ অস্ত্র রফতানি এখনও অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৬ হাজার ৫০০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।