মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘চূড়ান্ত’ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। তবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ছাড়া কোনও চুক্তি টেকসই হবে না, এমন অবস্থানে এখনও অনড় তারা। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে একেবারে নির্মূল করা হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ’ মেনে নিয়েছে। তিনি একে ‘দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ’ আলোচনার ফল বলে অভিহিত করেছেন।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা মিসর ও কাতারের কাছ থেকে পাওয়া নতুন প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে। তবে যুদ্ধ শেষ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা না থাকলে কোনও চুক্তি কার্যকর হবে না।
হামাসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি নিয়ে নেতারা আলোচনা করছেন এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, হামাস থাকবে না। হামাস্তান ফিরে আসবে না। এটা শেষ হয়ে গেছে।
তিনি দেশটির ট্রান্স-ইসরায়েল পাইপলাইন প্রকল্পের এক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন।
তার এই বক্তব্যে হামাসকে নির্মূলের পুরনো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত ছাড়া নতুন কোনও সমঝোতার ইঙ্গিত নেই।
গাজায় ২১ মাসের টানা যুদ্ধের মধ্যে যারা বহুবার ঘর ছেড়ে পালিয়েছে এবং প্রতিদিন খাদ্য সংকটে ভুগছে, তাদের মধ্যে এই প্রস্তাব সামান্য হলেও আশার জন্ম দিয়েছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা কামাল বলেন, যদি এই যুদ্ধবিরতি হয়, অন্তত দুই মাসের জন্য হলেও, হাজারো প্রাণ বাঁচবে।
তবে অনেকেই সতর্ক। খান ইউনুসের বাসিন্দা আদনান আল আসার বলেন, ট্রাম্প এর আগেও বলেছিলেন চুক্তি হচ্ছে, কিন্তু হয়নি। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বন্ধে তিনি সিরিয়াস ছিলেন, আমরা চাই এবারও তিনি সিরিয়াস হোন।
আরেক বাসিন্দা সামির আল মাসরি বলেন, আমরা চাই যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হোক। এক-দুই মাসের বিরতির পর আবার যুদ্ধ শুরু হোক, এটা আর চাই না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ছে। তবে তার জোটের কট্টর ডানপন্থি অংশ চুক্তির বিরোধিতা করছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার বলেছেন, যদি জিম্মি মুক্তির সুযোগ থাকে, সেটি হাতছাড়া করা উচিত হবে না।
বর্তমানে হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ ঘোষণা দিয়েছেন, যদি জোটের কট্টর অংশ চুক্তির বিরোধিতা করে, তবে তার দল সংসদে সরকারের পতনের বিরুদ্ধে ‘সুরক্ষা’ দেবে।
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১৩৯
বুধবার গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পৃথক হামলায় কমপক্ষে ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এই সময় রাফাহ, খান ইউনুস এবং গাজা সিটির নতুন নতুন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবার উত্তর গাজায় ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল সুলতান, তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান একটি বিমান হামলায় নিহত হন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। সেই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর জবাবে গাজায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে তাতে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই যুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাইকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন সরাসরি ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে বা উচ্ছেদের নির্দেশের আওতায় রয়েছে।