ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের মুখে ভারতীয় নারী

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার প্রাণ রক্ষা এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নিহত ব্যক্তির পরিবারের ক্ষমার ওপর। আগামী ১৬ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

নিমিষা প্রিয়া ২০১৭ সালে তার সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, মাহদিকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ দিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ কেটে পানির ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়। তবে আদালতে নিমিষার আইনজীবী দাবি করেন, মাহদি তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন, তার অর্থ ও পাসপোর্ট জব্দ করেছিলেন এবং বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিতেন।

আইনজীবীর দাবি, পাসপোর্ট উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি মাহদিকে অজ্ঞান করার জন্য ওষুধ দেন, তবে মাত্রা বেশি হয়ে যায়। নিমিষা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্যাতনের শিকার বলে দাবি করেছেন।

২০২০ সালে স্থানীয় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। ইয়েমেনের সর্বোচ্চ আদালতে তার পরিবারের আপিল ২০২৩ সালে খারিজ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হুথি বিদ্রোহীদের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত তার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন।

ইসলামি শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত ইয়েমেনি বিচার ব্যবস্থায় রায় কার্যকর হওয়ার আগে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে রক্তমূল্য দিয়ে ক্ষমা পাওয়া শেষ আশার পথ।

নিমিষার মা কেরালার একজন গৃহকর্মী। মেয়েকে বাঁচাতে গত এপ্রিল থেকে ইয়েমেনে অবস্থান করছেন তিনি। মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছেন ইয়েমেনপ্রবাসী সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম। তাকে মায়ের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

সেভ নিমিষা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন এই উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করছে। সংগঠনের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, আমরা এখনও মাহদির পরিবারের ক্ষমার অপেক্ষায় আছি। তাদের অন্য কোনও দাবি থাকলেও সেটি জানানো হয়নি।

সংগঠনের আরেক সদস্য বাবু জন বলেন, কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে শেষ সিদ্ধান্ত মাহদির পরিবারের। তাদের সম্মতি ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।

ইতোমধ্যে মাহদির পরিবারকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার রক্তমূল্য দেওয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে বলে জানান স্যামুয়েল জেরোম। ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, তারা এখনও ঘটনাটির বিস্তারিত যাচাই করছেন।

২০০৮ সালে কেরালা থেকে পাড়ি দিয়ে ইয়েমেনে নার্স হিসেবে কাজ শুরু করেন নিমিষা প্রিয়া। বর্তমানে তিনি রাজধানী সানা'র কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।