রবিবার কাতারের রাজধানী দোহায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) ও এ সংস্থার বাইরে থাকা বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অংশ নেয়। বৈঠকে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। দীর্ঘ আলোচনা হলেও কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক।
আরও পড়ুন: সৌদি-ইরান দ্বন্দ্বে তেল উৎপাদন কমানো নিয়ে অনিশ্চয়তা
কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ আল-সাদা বলেন, দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর অংশগ্রহণকারী কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। বিভিন্ন পক্ষগুলোর মধ্যে জুনে পরবর্তী বৈঠক পর্যন্ত পারস্পরিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ওমানের তেলমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-রুমহি জানান, চুক্তিতে না পৌঁছাতে পারার পেছনে একটি কারণ হলো, বৈঠকে ওপেকের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকাল পর্যন্ত মনে করেছিলাম আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব। ইরান এই বৈঠকে আসছে না, এটা আমরা জানতাম না।’
তেল উৎপাদন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র মাসখানেক আগে ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইরান আগেই ঘোষণা দিয়েছিল তেল উৎপাদন বাড়ানোর। আর রবিবার সকালে সৌদি আরব জানায়, বৈঠকে ওপেকের সব সদস্যকে উপস্থিত হতে হবে এবং সবাই যদি রাজি হয় তাহলে তারাও উৎপাদন কমিয়ে আনবে। ফলে রবিবার সকালেই নিশ্চিত হয়ে যায় বৈঠকে উৎপাদন কমানোর বিষয়ে কোনও চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের আরও খবর: কমে যাচ্ছে আইএসের আয়
বৈঠকেও সৌদি আরবের মতো বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশগুলো অবশ্য তেল উৎপাদন না কমানোর পক্ষে মত দিয়েছে। তেলের উৎপাদন কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ওপেক বহির্ভূত দেশের কাছে ক্রেতা হারাতে চান না বলে জানান তারা।
তবে বৈঠকে না অংশগ্রহণ করলেও ইরান জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার পূর্বে বিশ্ববাজারে তাদের যে অবস্থা ছিল, তা ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার মতো কোনও প্রস্তাব তারা গ্রহণ করবে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী তেল উৎপাদন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। ধারণা করা হচ্ছে, জুনে আরেক দফা ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে তেলের উৎপাদন। ইরান তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দিলে তেলের মূল্য আরও কমে যেতে পারে। মূল্য কমে যাওয়ায় ইকুয়েডর ও ভেনেজুয়েলা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। ১৯৪০-এর দশকের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি চলতি বছরে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দোহাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ আবদুরহিম আল-হোর বলেন, ‘বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবগুলো দেশেরই নিজেদের পৃথক আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ রয়েছে। ফলে বৈঠকে তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।’
আরও পড়ুন: যাত্রীবাহী বিমানে ড্রোনের আঘাত!
বর্তমানে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৪০ ডলার, শিগগিরই তা ৩৫ ডলারে নেমে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবদুরহিম। তিনি বলেন, চলিত বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি ব্যারেল তেলের মূল্য ২০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যেই রয়েছে। এখন তা আরও কমলে ক্ষতির পরিমাণটাও বেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। এর সদস্য দেশগুলো হলো – আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, ইকুয়েডর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কুয়েত, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও ভেনেজুয়েলা। সূত্র: আল-জাজিরা।
/এসএ/এএ/