জাসিন্ডার নিউ জিল্যান্ডও সৌদি জোটের অস্ত্র সরবরাহকারী?

নিউ জিল্যান্ড ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থল বাহিনীর জন্য অস্ত্র রফতানির অনুমোদন দিয়েছিল বলে খবর দিয়েছে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। রেডিও নিউ জিল্যান্ডের (আরএনজেড) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,  জাসিন্ডা আর্ডার্ন সরকারের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (এমএফএটি) ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, সৌদি আরবের জোটসঙ্গী আমিরাতকে অস্ত্র দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিউ জিল্যান্ড ইয়েমেন যুদ্ধে ভূমিকা রাখছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের দাবি, ইয়েমেন যুদ্ধে এগুলো ব্যবহার করা হবে না তা নিশ্চিত করেই রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। সংযুক্ত আরব আমিরাত এ জোটেরই অংশ। ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে লাখো মানুষ। অনেকে ভুগছে অপুষ্টিতে। ইয়েমেন যুদ্ধকে জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকঠ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইয়েমেনের তিন কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৮০ ভাগেরই জরুরি সহায়তা কিংবা সুরক্ষা প্রয়োজন।

মঙ্গলবার আরএনজেড-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তথ্য আইনের আওতায় তারা কিছু সরকারি নথি হাতে পেয়েছে। সেখানে দেখা গেছে ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থল বাহিনীর জন্য অস্ত্র রফতানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। স্থল বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আর্টিলারি কন্ট্রোল সিস্টেম রফতানিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কারা এসব অস্ত্র রফতানি করেছে কিংবা কী পরিমাণে সরবরাহ করা হয়েছে এবং এগুলোর মূল্য কত তা প্রকাশ করা হয়নি।

এক মাস আগে পৃথক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল। সৌদি আরবের নৌ বাহিনীর একটি জাহাজের ইঞ্জিন নিয়ে এয়ার নিউ জিল্যান্ড কোম্পানির কাজ করার ঘটনায় তদন্ত চেয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নের নির্দেশের পর ওই অনুমতি দেওয়া হয়।

নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, ‘এমএফএটি নিউ জিল্যান্ড এক্সপোর্ট কন্ট্রোলস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জমা পড়া সব আবেদন মূল্যায়ন করেছে। কোনও সরঞ্জাম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে ব্যবহার হবে কিনা কিংবা কোনও দেশে রফতানির ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা সেগুলোও মূল্যায়ন করা হয়েছে।’ তবে তা মানতে নারাজ নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক এক কর্মকর্তা। রফতানি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাবেক কর্মকর্তা আরএনজেড-কে বলেন, সৌদি আরবে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো নিয়ে রফতানি কর্তৃপক্ষ যে সাফাই গাইছে তা ‘বাজে কথা’। মন্ত্রণালয় জানেই না এর শেষ কোথায়।

‘যুদ্ধাপরাধে ব্যবহার করা হবে না বলে বিশ্বাস করে সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম পাঠনোর কথা বলছে নিউ জিল্যান্ড। তবে এর মধ্য দিয়ে যে অন্যায় কাজ তারা করেছে তা কি মুছে ফেলা যাবে?’ প্রশ্ন রাখেন সাবেক ওই কর্মকর্তা।