'মানুষের যৌনতার ইতিহাস ধারণার চেয়েও দুঃসাহসিক'

বিশ্বের মানবজাতির ইতিহাস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন তথ্য উদঘাটিত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেলো মানুষের যৌনতার ইতিহাস এখন পর্যন্ত মানুষ যা ভাবত তার চেয়েও বেশি দুঃসাহসিক। কারণ বর্তমান মানবজাতির সঙ্গে বিলুপ্ত মানব প্রজাতি নিয়নডার্থালের কথা আগেই জানা হয়ে গেছে। তবে বিলুপ্ত হওয়া আরেক রহস্যময় মানবপ্রজাতি ডেনিসোভানসের সঙ্গে নিয়নডার্থাল ও এখানকার মানুষের যৌন সম্পর্ক ও সংকর প্রজননের কথা অজানাই ছিল। এ গবেষণায় বিষয়টি ওঠে এসেছে। এছাড়া বিজ্ঞানীরা আরেকটি প্রজাতির অস্তিত্ব পেয়েছেন, যাদের সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণাই নেই।

noname

শুক্রবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।  বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেড় হাজার মানুষের জিনের ওপর গবেষণা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা নিউ গিনির উত্তরাঞ্চলের দ্বীপ মেলানেসিয়া থেকে ৩৫ জন মানুষের ডিএনএ পর্যালোচনা করেন। এদের শতাংশ মানুষের নিয়নডার্থাল পূর্বপ্রজন্ম রয়েছে। একই সঙ্গে ২-৪ শতাংশের জিনে ডেনিসোভানস পূর্বপ্রজন্মেরও অস্তিত্ব রয়েছে।

আফ্রিকার মানুষের মধ্যে নিয়নডার্থাল অথবা ডিনোসোভান প্রজাতির জিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কারণ এই দুই প্রজাতি কখনও ওই মহাদেশে যায়নি। অ-আফ্রিকান মানুষদের মধ্যে দেড় থেকে চার শতাংশ পর্যন্ত নিয়নডার্থাল জেনেটিক পূর্বপ্রজন্ম পাওয়া গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দশ হাজার বছর আগে চারটি মানবপ্রজাতির সংকর প্রজনন শুরু হয়। এদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান মানব প্রজাতি, নিয়নডার্থাল ও একটি রহস্যময় বিলুপ্ত মানব প্রজাতির ডেনিসোভানস। এছাড়া আরেকটি প্রজাতি রয়েছে যাদের সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণাই নেই।   

গবেষণায় জানা গেছে, মেলানেসিয়ার প্রত্যন্ত দ্বীপের মানুষরাই ডেনিসোভানস মানুষের জিন ধারণ করছেন। এই মেলানেসিয়ানদের অধিকাংশ মানুষের মতোই জেনেটিক পূর্ব প্রজন্ম নিয়নডার্থাল।

যৌনতার ইতিহাসকে দুঃসাহসিক হিসেবে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ গত দশকে ডেনিসোভিয়ানদের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হতো হাতের আঙ্গুলের মতো ছোট হাড় ও দুটি দাঁতের মানুষ ছিল তারা। বাস করত উত্তর সার্বেরিয়ার গুহায়। আর শক্তসামর্থ্য বৃহদাকারের নিয়নডার্থাল মানুষেরা সাড়ে তিনলাখ বছর আগে ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। ৪০ হাজার বছর আগে এ মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ডেনিসোভিয়ান সম্পর্কে এর বেশি বিশেষ কিছু এখনও জানা যায়নি। যেটুকু জানা গেছে, তাতে সাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চলেই ডেনিসোভানরা বসবাস করত। কিন্তু তাদের জিন পাওয়া গেছে অনেক দূরে বসবাসকারী মেলানেসিয়ার মানুষের মধ্যে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ডেনিসোভানদের এশিয়ার বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে অবস্থান ছিল।

গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের জিনবিদ জশুয়া আকেই জানান, এ বিলুপ্ত মানবপ্রজাতির জিনে মানুষের জন্য বেশ কিছু উপকারী উপাদান পেয়েছেন গবেষকরা। এদের মধ্যে আছে প্রতিরোধক ব্যবস্থা যা জীবাণুর বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকর। এছাড়া বেশ কিছু উপাদান চামড়া ও চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিংহামটন ইউনিভার্সিটির আণবিক নৃতত্ত্ববিদ ড. অ্যান্ড্রিই মেরিওয়েদার জানান, গবেষকরা মানুষের জিনে চতুর্থ আরেকটি প্রজাতির অস্তিত্ব পেয়েছেন। যাদের সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণাই নেই। তিনি বলেন, এতে প্রমাণ হয় যে, অন্তত চারটি প্রজাতির মানুষের অস্তিত্ব ছিল। তারা একই সময়ে বেঁচে ছিল। প্রায় ১ লাখ বছর আগে এসব প্রজাতির মানুষের মধ্যে সংকর প্রজনন হয়। দশ বছর আগেও মানুষ যা চিন্তা করতে পারত না। সূত্র: রয়টার্স।

/এএ/