পশ্চিমাদের পুতিনের হুমকি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেছেন, ন্যাটো যদি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে সামরিক অবকাঠামো জোরদার করতে শুরু করে তাহলে রাশিয়া পদক্ষেপ নেবে। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটো জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একদিন পর সোমবার তিনি এই হুমকি দিলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা পুতিন বারবার সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে পূর্ব ইউরোপে রুশ সীমান্তের কাছাকাছি ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে আসছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধের একটি কারণ হিসেবেও তিনি ন্যাটোর সম্প্রসারণকে দায়ী করছেন।

রুশ প্রভাবিত সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোটের নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, ইতোমধ্যে জটিলতায় থাকা বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে ন্যাটোর সম্প্রসারণকে আগ্রাসী উপায়ে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

পুতিন দাবি করেন, ফিনল্যান্ড বা সুইডেনের সঙ্গে রাশিয়ার কোনও সমস্যা নেই। তাই এই দুটির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ন্যাটোর সম্প্রসারণে প্রত্যক্ষ কোনও হুমকি নেই।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, কিন্তু দেশ দুটির ভূখণ্ডে সামরিক অবকাঠামোর সম্প্রসারণ নিশ্চিতভাবে আমাদের পদক্ষেপ নিতে উসকানি দেবে।

সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর এই জোটের নাম কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও)। এতে রয়েছে বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান।

পুতিন বলেন, কেমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে – তারা আমাদের জন্য কী হুমকি করে তার ওপর নির্ভর করবে। কোনও কারণ ছাড়াই সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদেরও সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে।

নরডিক অঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণে পাল্টা পদক্ষেপের বিষয়ে রাশিয়া খুব কম বিস্তারিত জানিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এটিই বৃহত্তম কৌশলগত পরিবর্তন।

পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ গত মাসে বলেছিলেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে মোতায়েন করতে পারে।

১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটো সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্র থেকে শুরু করে সব সামরিক খাতে রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছে জোটটি। জোটের মূল সামরিক শক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র। সুদূর ইউরোপেও দেশটির সেনা মোতায়েন রয়েছে।

পুতিনের বক্তব্যের আগে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, নরডিক অঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়া সহজে মেনে নেবে বলে পশ্চিমাদের কোনও বিভ্রম থাকা উচিত না।

ন্যাটোতে পারমাণবিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো ওয়ারশ চুক্তির আওতাধীন প্রজাতন্ত্র। পশ্চিমারা বলে আসছে, ৩০ সদস্যের ন্যাটো প্রতিরক্ষামূলক।

মস্কো বলে আসছে, ন্যাটো রাশিয়াকে হুমকি দিয়ে আসছে এবং ওয়াশিংটন বারবার রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে ক্রেমলিনের নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করছে। ১৮১২ ও ১৯৪১ সালে দুটি বিপর্যয়কর ইউরোপীয় আক্রমণের কারণ ছিল রাশিয়ার এই সীমান্ত।

রাশিয়ার কাছ থেকে ১৯১৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ফিনল্যান্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে দুটি যুদ্ধ লড়েছে দেশটি। এসব যুদ্ধে রাশিয়ার কাছে তারা ভূখণ্ড হারিয়েছে। ২০০ বছরের মধ্যে কোনও যুদ্ধে জড়ায়নি সুইডেন। দেশটির পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ।

পুতিন বলেছেন, সীমাহীন সম্প্রসারণ নীতি ছাড়াও ন্যাটো তাদের ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চল ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যে প্রবণতায় রাশিয়া সতর্কভাবে নজর রাখছে।

তিনি আরও দাবি করেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ আবশ্যক ছিল কারণ যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাশিয়াকে হুমকি দিচ্ছে এবং মস্কোকে রুশ ভাষাভাষী মানুষকে নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল রাশিয়া অভিমূখে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ হবে না। তিনি বলছেন, এটি ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, যার মাধ্যমে রাশিয়ার ঐতিহাসিক দুর্বলতার সময় হেনস্তা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো আপত্তি জানিয়ে বলছে, স্পষ্টভাবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। কিয়েভ ও দেশটির পশ্চিমা সমর্থনকারীরা বলছে, রুশ ভাষাভাষীদের নিপীড়ন বাড়িয়ে বলছে মস্কো। যাতে করে সার্বভৌম রাষ্ট্রে উসকানি ছাড়া যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করা যায়।