ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন টিউলিপ সিদ্দিক

 

টিউলিপ সিদ্দিক (ফাইল ছবি: সংগৃহীত)যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। ইরানে গ্রেফতার হওয়া এক ব্রিটিশ নারী বিষয়ে জনসনের বিতর্কিত মন্তব্যের জের ধরে এই দাবি জানিয়েছেন টিউলিপ।

লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এ ব্রিটিশ এমপি বঙ্গবন্ধুর নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। ইরানে আটক হওয়া তার নির্বাচনি এলাকার এক বন্দির মুক্তির জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তিনি। জানা যায়, ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ইরানের কারাগারে বন্দি রয়েছেন নাজানিন জাগহারি র‍্যাটক্লিফ নামের ৩৩ বছর বয়সী ওই নারী। এর আগে ইরানের সরকার উৎখাতের কথিত প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত সপ্তাহে হাউস অব কমন্সের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরিস জনসন। এ সময় তিনি বলেন, জাগহারি র‌্যাটক্লিফ তেহরানে অবস্থানকালে সাংবাদিকতা পড়াতেন, ওই সময়ই তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তবে জনসনের এ মন্তব্যকে ‘গুরুতর ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। কারণ ব্রিটেন ও ইরানের দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ওই নারী তখন তেহরানে সেবামূলক কাজ করছিলেন, সাংবাদিক বা সাংবাদিকতার শিক্ষক হিসেবে তিনি সেখানে ছিলেন না। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুল বক্তব্যের কারণে ইরানে আটক নাজানিন জাগহারি র‍্যাটক্লিফের কারাদণ্ড আরও পাঁচ বছর বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে ইরানের আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের দণ্ড ভোগ করছেন তিনি।

নাজানিন সম্পর্কে ভুল বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভুলের কারণে নিজের নির্বাচনি এলাকার ওই ব্যক্তিকে যদি একদিনও বেশি জেলে থাকতে হয় তাহলে জনসনের পদত্যাগ করা উচিত বলে দাবি করেছেন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বরিস জনসনকে অবশ্যই তার মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে ও সঠিত তথ্য বলতে হবে। তাকে অবশ্যই পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে দেওয়া নাজানিন বা তার পরিবারকে দেখতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। ব্রিটেনের সিনিয়র কূটনীতিক হিসেবে এ ব্যাপারে জনসনের ভূমিকা তার মর্যাদাকেই প্রতিফলিত করবে। তিনি যদি সঠিকভাবে এ দায়িত্বপালন পালন করতে ব্যর্থ হন তাহলে নিজের পদ থেকে সরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে তার জন্য।’

এ ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার ঘটনায় ব্রিটেনের মন্ত্রিসভায় জনসনের অবস্থান অনেকটাই নড়ে গিয়েছে।  এ প্রসঙ্গে পার্লামেন্টে টিউলিপ সিদ্দিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের কোনও সন্দেহ নেই যে- গত বছর যে সময়ে তিনি (আটক নাজানিন) ইরানে গ্রেফতার হয়েছেন, তখন তিনি সেখানে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।’

কিন্তু লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ এ জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। জনসনের কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য শুধু দায়সারা ব্যাখ্যা দেওয়াটা যথেষ্ট নয়। নাজানিন সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য এবং তাকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।’

জানা গেছে, নাজানিন জাগহারি র‌্যাটক্লিফকে গত বছরের এপ্রিলে তেহরান এয়ারপোর্টে আটক করা হয়। সেসময় নিজের মেয়ের সঙ্গে তেহরান ভ্রমন শেষে যুক্তরাজ্যে ফিরছিলেন তিনি। তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সঠিক উপায় অবলম্বন করে এবং শুধু ছুটি কাটানোর জন্যেই ইরান গিয়েছিলেন নাজানিন। তার মেয়েকে ইরানিয়ান নানা-নানির পরিবারের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাওয়াটাই মূল্য উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তাকে ইরান সরকারের বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্রের সন্দেহে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি তা পুরোপুরি অস্বীকার করে আসছেন।

সম্প্রতি, নভেম্বরের ৪ তারিখে তেহরানের আদালতে আবারও হাজির করা হয় নাজানিনকে। গত সপ্তাহে ব্রিটেনের হাউজ অব কমন্সে দেওয়া ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের বক্তব্যের উদ্ধৃতিকে তার বিরুদ্ধে নতুন প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সেখানে। ইরানিয়ান শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর সন্দেহে নাজানিনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ইরানের আদালতে। কিন্তু নাজানিন জাগহারি র‌্যাটক্লিফের লন্ডনে বসবাসকারী স্বামী রিচার্ড র‌্যাটক্লিফ নিজের স্ত্রীকে নিরপরাধ দাবি করেছেন। তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নাজানিনকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে বলেছেন।  

পরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফকে ফোন করে জনসন বলেছেন, তার দেওয়া বক্তব্যটির পেছনে আসলে কোনও সমর্থনযোগ্য ভিত্তি ছিল না, তাই কোনও আইনি প্রক্রিয়ায় এটি ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া এ বিষয়ে আলোচনার জন্য এ বছরের শেষের দিকে তিনি ইরানে যেতে চান বলেও জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

ইরানের  সরকারকে উৎখাতের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার আদালতের রায়ে জাগাহারি র‌্যাটক্লিফকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ বছরের এপ্রিলের অনুষ্ঠিত শেষ শুনানিতে হেরে যান জাগাহারি। আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া আগাম মুক্তির সুযোগের আওতায় প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু আগাম মুক্তির সুযোগ রোধে তাকে এখন সতুন করে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার স্বামী।