যুক্তরাজ্যে ভিসা আবেদন বাতিলের প্রতিবাদে ৩১ হাজার স্বাক্ষর

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ দেখিয়ে বাংলাদেশসহ ও অন্যান্য দেশের শত শত দক্ষ পেশাজীবীদের যুক্তরাজ্যে থাকা ও কাজ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া ভিসা আবেদন বাতিল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে উন্মুক্ত আবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারা ৩২২(৫) ধারার ‘অপব্যবহার’ বন্ধে প্রকাশিত আবেদনটি রয়েছে ‘থার্টি এইট ডিগ্রি ক্যাম্পেইন’ ওয়েবসাইটে। গত সপ্তাহে এক দল পেশাজীবী আবেদনটি অনলাইনে প্রকাশ করেছেন। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমরা এক যোগে দাবি জানাচ্ছি, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন ওই ধারাটি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে ব্যবহার করে।’uk-2018-immigration-rules

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া অভিবাসীরা অন্তত ৫ বছর বসবাসের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের অনুমতি (আইএলআর) বা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারতেন। যদিও তারা যে টায়ার ওয়ান (জেনারেল) ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তা ২০১১ সকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে যারা ওই ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তারা গত এপ্রিল পর্যন্ত আইএলআরের জন্য আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাছাই প্রক্রিয়ায় বাতিল হয়ে যাওয়া আবেদনপত্রগুলোর ক্ষেত্রে আইন বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট একটি প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। স্থায়ী বসবাসের আবেদন বাছাইয়ে জড়িত কর্মকর্তারা আবেদন বাতিল করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী আইনের ৩২২(৫) ধারা প্রয়োগ করেছেন। ওই ধারায় বলা হয়েছে, অভিযুক্ত অপরাধীদের ও সন্ত্রাসীদের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে দেওয়া হবে না। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কর বিভাগে আয়ের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় আবেদনকারী দক্ষ পেশাজীবীদের ‘চারিত্রিক সততা’ নিতে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্তত ১০০০ জনের আবেদনপত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুনর্বিবেচনার আবেদন গৃহীত না হলে তাদেরকে যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলিন নোক্স বাতিল হয়ে যাওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে কোনগুলো আসলেই জালিয়াতি আর কোনগুলো আসলেই কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ির কারণে বাতিল হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে একটি নিরীক্ষা প্রক্রিয়া চালু করেছেন।

যুক্তরাজ্যের নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ সংসদীয় কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন, ভিসা আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চালানো নিরীক্ষার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেস তিনি নিজেই দেখবেন। চিকিৎসক, শিক্ষক, উদ্যোক্তাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত পেশাজীবীদের সবাই ইউরোপীয় অঞ্চল বহির্ভূত দেশে থেকে টায়ার ওয়ান (জেনারেল) ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। আয়কর সংক্রান্ত আইনত গ্রহণযোগ্য সামান্য সংশোধনীর অজুহাত দেখিয়ে তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।

হাউজ অফ কমনস হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির (এইচএএসসি) কাছে জাভেদ বলেছেন, ভুল কারণ দেখিয়ে বা তথ্যের যথাযথ বাছাইয়ের অভাবে টায়ার ওয়ান ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসা ব্যক্তিদের আবেদন বাতিল করে দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা যদি আসলেই ভুলের বিষয় হয়ে তাহকে, আথলে তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভিসা আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার অন্তত ৩০০টি ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় নিরীক্ষা চলছে। যুক্তরাজ্যের একজন বিচারক কেসগুলো দেখছেন। মন্ত্রীকে এইচএএসসির সদস্যরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা আরেকটি উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির রূপ নিতে পারে। প্রায় ৬৩ জন ক্যারিবিয়ান অভিবাসীকে ভুল সিদ্ধান্তের বশবর্তী হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটি উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পেয়েছে। ওই ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে সংসদকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে জাভেদের পূর্ববর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

লেবার পার্টির এমপি এবং এইচএএসসির সদস্য নাজ শাহ জাভিদকে বলেছেন, ‘এই ঘটনায় উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সেই সময়েও বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে মনে হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে ঠিক মতো খোঁজ রাখে না।’

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, শুনানিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উওস্থিত হওয়ার পর এইচএমআরসি সংক্রান্ত টায়ার ওয়ান ভিসা নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে এবংগ নিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।