পুতিনের কাছ থেকে ‘পুরস্কার’ নিয়েছিলেন স্ক্রিপালের হামলাকারী

যুক্তরাজ্যের সালসবেরিতে সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়ের ওপর নার্ভ এজেন্ট (বিষাক্ত গ্যাস) হামলা চালানো দুই সন্দেহভাজনের একজন সামরিক কর্মকর্তা। অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট ব্যালিংগ্যাট এই খবর দিয়ে সন্দেহভাজন এই রুশ নাগরিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে ‘সম্মানজনক পুরস্কার’ পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছে। কর্নেল অ্যানাতোলি কেপিগা নামের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা চেচনিয়া ও ইউক্রেনে দায়িত্ব পালন করায় ২০১৪ সালে তিনি পুতিনের কাছ থেকে ‘হিরো অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন’ নামে একটি সম্মানজনক পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন বলে দাবি ওয়েবসাইটটির।

_103596881_4295c99b-9603-4272-9e02-4fd851718425 (1)

গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সালসবেরি শহরের একটি বিপণিকেন্দ্রের বেঞ্চে পক্ষত্যাগী রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার ৩৩ বছরের কন্যা ইউলিয়াকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় ব্যবহৃত নার্ভ এজেন্টের সন্ধান পায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে দুইজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় ব্রিটিশ পুলিশ। তবে ব্যালিংগ্যাট ওয়েবসাইটের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি দাবি করেছে, ব্যালিংগ্যাটের অনুসন্ধানের বিষয়ে দ্বিমত নেই ব্রিটিশ তদন্তকারীদের।

ওই হামলার ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার জেরে যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া পরস্পরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। ওই সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এই হামলায় পুতিনের প্রত্যক্ষ মদদ থাকা অভিযোগ তুলেছিলেন। তবে এই অভিযোগকে জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল রাশিয়া।

ব্যালিংগ্যাটের নতুন অনুসন্ধানকে নাকচ করে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। তিনি দাবি করেছেন, এর কোনও প্রমাণ নেই।

এম-১৬ সংক্রান্ত গোপন তথ্য বিক্রি করা সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া নার্ভ এজেন্ট নভিচক হামলায় বেঁচে গেলেও জুলাইতে একই ধরনের আরেক হামলায় মারা যান ডন স্টুগ্রেস নামে স্থানীয় এক নারী। ধারণা করা হয়ে থাকে সন্দেহভাজন হামলাকারী কর্নেল অ্যানাতোলি কেপিগা ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন অপর এক রুশ নাগরিক। যিনি তার নাম ব্যবহার করেছিলেন অ্যালেক্সান্ডার পেত্রভ।

নিজেদের অনলাইন তদন্তকারী দাবি করা ব্যালিংগ্যাট বলছে, তারা ওপেন সোর্স কম্পিউটার সফটওয়্যার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তদন্তের সূত্র ধরে ওয়েবসাইটটি দাবি করেছে, ৩৯ বছর বয়স্ক অ্যানাতোলি কেপিগা রাশিয়ার সম্ভ্রান্ত বিদ্যাপীঠে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর জিআরইউ ইউনিটের বিশেষ বাহিনীতে কাজ করেছেন তিনি। পেশাগত জীবনে ২০টি সামরিক পুরস্কার পেয়েছেন কেপিগা। ধারণা করা হয় ২০০৯ সালে মস্কোতে তাকে বদলি করা হয়। সেখানে তাকে রুসলান বসিরভ নামে ভুয়া পরিচয় দেওয়া হয়। গত নয় বছর ধরে তিনি গোপন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে গোপন এক অনুষ্ঠানে তাকে ‘হিরো অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন’ পুরস্কার দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে সাধারণত প্রেসিডেন্ট পুতিন উপস্থিত থেকে পুরস্কার হস্তান্তর করে থাকেন।

৪ মার্চ বিষ হামলা চালানোর আগে সামরিক কর্মকর্তা অ্যানাতোলি কেপিগা ভুয়া রুসলান বসিরভ নামে অপর সঙ্গী পেত্রভকে নিয়ে মস্কোর গ্যাটউয়িক বিমানবন্দর থেকে চলতি বছরের ২ মার্চ রওনা দেন। এর দুইদিন পরই তারা সালসবেরিতে হামলা চালানোর সময়ে হাজির ছিলেন। একই দিনে তার মস্কোতে ফিরে যান। পরে অবশ্য দুই জনের বিরুদ্ধেই ইউরোপিয়ান ও ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।  তবে নিজ নাগরিকদের ফেরত পাঠায়নি রাশিয়া।

ব্রিটিশ পুলিশ দুই হামলাকারীকে বসিরভ ও পেত্রভ নামে চিহ্নিত করার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জোর দিয়ে বলেছিলেন, তারা নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক। রুশ প্রেসিডেন্টের এই দাবির পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর রুশ টেলিভিশনে হাজির হয়ে ওই দুজন দাবি করেন তারা শুধু পর্যটক ছিলেন। শহরটির বিখ্যাত ক্যাথিড্রাল দেখতে গিয়েছিলেন তারা। নিজেদের ক্রীড়া পুষ্টি বিষয়ক ব্যবসা থাকার দাবি করে তারা বলেছিলেন আনন্দের জন্যই সেখানে ভ্রমণ করেছিলেন। কোনও  নিনা রিসি পার্মফিউম বোতল বহনের কথা অস্বীকার করেন তারা।

ব্রিটিশ তদন্তকারীদের দাবি, এই বোতলে করেই নার্ভ এজেন্ট বহন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অভিযোগে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন বলে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন তারা।