ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শুধুই ‘একজন রোগী’: নার্স জেনি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। কয়েক দিন আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। পরে প্রশংসা করেছেন আইসিইউতে তাকে দেখাশোনা করা নার্স জেনি ম্যাকগি'র। তবে জেনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কাছে আর পাঁচ জন রোগীর মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তাকে নিয়ে কখনও তিনি আলাদা কিছু ভাবেননি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

stream_img

করোনা মহামারিতে ধনী থেকে গরিব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন। বিশ্বজুড়ে খেলোয়াড়, অভিনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অন্যান্য তারকা– অনেকেই এই রোগের কবলে পড়েছেন। বাদ যাননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজেও। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই তার দেহে করোনা শনাক্ত হয়। অবস্থার অবনতি হলে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার (এনএইচএস) অন্তর্ভুক্ত লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১২ এপ্রিল তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এর পরেই তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করেন আলাদা করে। সেই সঙ্গে বিশেষভাবে নাম উল্লেখ করেন জেনি ম্যাকগি নামের এক নার্সের, যিনি আইসিইউ’তে সর্বক্ষণ তার খেয়াল রাখতেন। জেনি টানা তিন রাত জেগেছিলেন।

জনসনের প্রশংসার কথা জানতে পেরে অবাক হয়েছেন জেনি ম্যাকগি। প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তিনি শুধু তার কর্তব্যটুকুই পালন করেছেন। মানুষের সেবা করাই তার কাজ। এ সময় তিনি কার সেবা করছেন তা আলাদা করে ভাবেন না। অন্য রোগী হলেও তিনি রাত জাগতেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কাছে শুধু একজন রোগীই ছিলেন, এর বেশি কিছুই না।

বরিস জনসন বিশেষভাবে তার প্রশংসা করার খবর প্রথমে জেনি বিশ্বাস করেননি। বন্ধুদের কাছে শুনে ভেবেছিলেন তারা মজা করছেন। পরে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি দেখে বিশ্বাস করেন। এরপর তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রোগটি সবার জন্যই ভয়াবহ। তাই কোনও রোগীর ক্ষেত্রেই এই রোগকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। রোগী যিনিই হন, প্রত্যেকের প্রতিই সচেতন হতে হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের।

নিউ জিল্যান্ডের নাগরিক জেনি ম্যাকগি ১০ বছর ধরে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এই হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার বিভাগে একজন নার্স হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, চোখের সামনে তিনি অনেক মানুষকে তাদের প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যেতে দেখেছেন, সেটাই তার কাজের সব থেকে যন্ত্রণাদায়ক বিষয়।

জেনি মনে করেন, একজন নার্সের দায়িত্ব হলো এমন সময়ে নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে, কর্তব্যে অবিচল থেকে, সেই প্রিয়জনদের হাত ধরে তাদের পাশে দাঁড়ানো। করোনার এই আতঙ্কেও তাদের এই বিশেষ ভূমিকার খুব প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তার পরে জেনি এখন সবার ভালোবাসার পাত্রী। তাকে নিয়ে আলোচনা করছেন সবাই। নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই নার্সের। তিনি জানিয়েছেন, তার দেশও জেনি ম্যাকগির জন্য গর্বিত। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তায় জেনি নিজেও আপ্লুত।