উপনির্বাচনে চমক দেখালেন স্বতন্ত্র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নুরজাহান

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের পূর্বাঞ্চলীয় আসন রেডব্রিজে উপ-নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরজাহান বেগম। তিনি ক্ষমতাসীন লেবার পা‌র্টির প্রার্থীকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। তার এই বিজয় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়ের সবশেষ ন‌জির হিসেবে দেখছেন‌ নির্বাচনি পর্যবেক্ষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্ব লন্ডনের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে, যা সম্প্রতি উপ-নির্বাচনের ফলাফল থেকে প্রমাণিত হ‌চ্ছে। ব্রিটেনের ক্ষমতায় বসার বছর না পার হতেই লেবার পা‌র্টির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে পরা‌জিত হ‌চ্ছেন।

সম্প্রতি নির্বাচনি ফলাফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উত্থান, বিশেষ করে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন পাচ্ছেন। এই প্রার্থীরা স্থানীয় উদ্বেগ এবং সরকারের নীতিমালার মতো বৃহত্তর বিষয়গুলোতে এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে লেবার পার্টির অবস্থানের উপর মনোনিবেশ করে তৃণমূল স্তরের ক্ষোভকে কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে জয়ী হচ্ছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এই নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ভোটার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পূর্ব লন্ডনে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী দল লেবার পার্টি এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। উপ-নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দল এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী ভোটার ভিত্তির অংশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় ভোটাররা তাদের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত প্রার্থীদের ভোট দিতে আগ্রহী।

মূলত পূর্ব লন্ডনের সাম্প্রতিক নির্বাচন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করছে, যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্থানীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপট পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

পূর্ব লন্ডনের কাউন্সিল উপনির্বাচনে লেবার পার্টির বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন, যা সরকারের প্রতি তৃণমূলের চলমান অসন্তোষের প্রতিফলন। নূর জাহান বেগম রেডব্রিজ কাউন্সিল আসনটি জিতেছেন যা পূর্বে জাস আথওয়ালের দখলে ছিল, যিনি গত বছর ইলফোর্ড সাউথের লেবার এমপি হয়েছিলেন।

নুরজাহান বেগম ১ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে লেবারের সেলিম মাজহারকে হারিয়েছেন, যিনি ৬৬৩ ভোট পেয়েছেন। কনজারভেটিভরা ৪৯৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

লেবার পার্টি স্বাস্থ্য সচিব ওয়েস স্ট্রিটিং এবং প্রাক্তন মন্ত্রী অ্যানেলিজ ডডস-সহ জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের ওয়ার্ডে প্রচারণার জন্য মোতায়েন করেছিল। তবে, পূর্ব লন্ডনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে দলটি ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। গাজা সংঘাতের বিষয়ে লেবারের অবস্থানের প্রতি ক্ষোভের কারণে বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে জয়লাভ এবং দলত্যাগের পর নিউহ্যামে স্বতন্ত্ররা বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে।

জয়ের পর নুর জাহান বেগম বার্মিংহাম এবং হার্টফোর্ডশায়ার থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী) ঐতিহাসিক জয় হয়েছে। মেফিল্ডের মানুষ জোরেশোরে এবং স্পষ্টভাবে কথা বলেছেন। তারা একটি নতুন ধরনের রাজনীতি বেছে নিয়েছে- সততা, অন্তর্ভুক্তি এবং স্বাধীনদের তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন।’

রেডব্রিজ এবং ইলফোর্ড ইন্ডিপেন্ডেন্টসের চেয়ারম্যান ওয়াসিম আহমেদ মন্তব্য করেছেন, সাধারণ মানুষ এমন একটি দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে যারা আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।