গুঁড়িয়ে দেওয়া আইএস ঘাঁটি সিআইএ’র তৈরি, ব্যবহার করতেন লাদেনও!

 

সিআইএ`র গোপন গুহা ও সুড়ঙ্গ পদ্ধতিবৃহস্পতিবার পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের নানগড়হর প্রদেশে  ‘মাদার অব অল বম্বস’খ্যাত মার্কিন বোমার বিস্ফোরণে আইএসের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। উইকিলিকস এক টুইটার পোস্টে বলছে, সুড়ঙ্গ ও গুহার সমন্বয়ে ওই ঘাঁটি তৈরি করেছে সিআই। দাবির পক্ষে ২০০৫ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনকে হাজির করেছে তারা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮০-এর দশকে সিআইএ আফগানদের সোভিয়েতবিরোধী লড়াই শক্তিশালী করতে এই গুহা ও সুড়ঙ্গ পদ্ধতি গড়ে তোলার জন্য অর্থায়ন করেছিল। এদিকে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদন বলছে, ২০০১ সালে ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের’ সময় লাদেন হত্যার উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হয়েছিল এই সুড়ঙ্গগুলো দিয়েই।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নানগড়হরে একটি মার্কিন বিমান থেকে ‘মাদার অব অল বম্বস’খ্যাত সেই বোমাটি ফেলা হয়।  হামলাস্থল অচিন জেলার গভর্নর ইসমাইল শেনওয়ারি মিডিয়াকে বলেন, ‘বোমায় অন্তত ৯২ জন আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে।’ হামলায় আইএসের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফক্স নিউজের এক খবর থেকে জানা গেছে, আইএস নানগড়হর-এর পাহাড়ে গুহা আর সুড়ঙ্গের সমন্বয়ে তৈরি একটি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে। নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য তারা এই ব্যবস্থাকে খুবই উপযোগী মনে করে। সেখানেই বৃহস্পতিবার পৃথিবীর সব চেয়ে বড় মার্কিন বোমা আছড়ে পড়েছে। নির্বাচনি প্রচারণাতেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকে সমূলে উৎপাটন করার অঙ্গীকার করেছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেন্টাগন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালো। পেন্টাগনের দাবি, নাঙ্গাহারের তালেবান সংশ্লিষ্টরাই এখন আইএসে যোগ দিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে সাড়া জাগানো বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস বলছে, এই সুড়ঙ্গ সিআইএ’র তৈরি করা। ২০০৫ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত  প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ৮০’র দশকে সিআইএ আফগানদের সোভিয়েতবিরোধী লড়াই শক্তিশালী করতে এই গুহা আর সুড়ঙ্গগুলো তৈরির জন্য অর্থায়ন করেছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওসামা বিন লাদেন সিআইএ’র অর্থায়নে তোরা বোরা পাহাড়কে ঘিরে ওইসব জটিল স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানকে মুক্ত করতে এগুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুজাহিদীনরা।

উইকিলিকসের টুইটারে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনের স্ত্রিন শট

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে সোভিয়েতবিরোধী আরেক জঙ্গিগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে সিআইএ’র কাছে অস্ত্র ও অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, তারাও ওই গুহা ও সুড়ঙ্গ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েছে।

এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানগড়হার প্রদেশে তোরা বোরা পাহাড়-সংলগ্ন যে সুড়ঙ্গ আর গুহাগুলো আইএস ব্যবহার করছে, সেগুলো সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। লাদেনের নেতৃত্বে  মুজাহিদীনরা ৮০-এর দশকে এই গুহা আর সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার করেই জালালাবাদ থেকে সোভিয়েত সেনাদের হটিয়েছিল।

আজ এসে সেই জালাবাবাদ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন সেনা-সমাবেশ।

আফগানিস্তানে ‘সবথেকে বড় মার্কিন বোমা’ ফেলাকে সফল অভিযান আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘বিশ্বসেরা’ উল্লেখ করে ট্রাম্প আফগান অভিযানকে মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই হামলা চালিয়ে তিনি ‘গর্বিত’। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসারকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর জানিয়েছে। তারা আরও জানায়, এটিই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া সবচেয়ে  বড় অপারমাণবিক মার্কিন বোমা।

সিরিয়ায় কয়েকদিন আগে এক মার্কিন বিমান হামলায় ‘ভুলক্রমে’ ১৮জন মানুষ নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানে এই হামলা করলো ট্রাম্প প্রশাসন।হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার জানিয়েছেন  ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেকে ‘গর্বিত’ দাবি করেছেন। বলেছেন, ‘কী ঘটেছে, তা সবার জানা।  আমি আমার সামরিক বাহিনীকে এই বোমা ফেলার কর্তৃত্ব দিয়েছি। ’  ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বসেরা সামরিক বাহিনী রয়েছে আর তারা তাদের স্বাভাবিক কাজটিই করেছে।’

/এমএনএইচ/