নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ওপর ক্ষিপ্ত ট্রাম্প

২০১৬ সালের নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা, এমন সংবাদ পরিবেশন করায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইট বার্তায় তিনি মন্তব্য করেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ‘উইচ হান্টে’ তাকে ঘায়েল করতে না পেরে এখন অন্যদিক দিয়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ‘বাজে তবে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে কম বাজে’ আখ্যা দিয়েছেন। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওই প্রতিক্রিয়ার পর তার আইনজীবী রুডি গিউলিয়ানি জানিয়েছেন, বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার আগামী সেপ্টেম্বর শুরুর আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে ইচ্ছুক। সামনের জুলাই মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।5472

২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনতে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওই নির্বাচনে কোনও প্রভাব খাটিয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্ত করছেন রবার্ট মুলার। রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোরও নাম এসেছে ট্রাম্পকে নির্বাচনে সহায়তা করার প্রশ্নে। সৌদি আরব আরব ও আরব আমিরাতের প্রতিনিধির সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা জানা গেছে। রবার্ট মুলার জর্জ নাদের নামের একজন ব্যক্তিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত যে সংবাদ নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাতে লেখা হয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের তিন মাস আগে ট্রাম্প টাওয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র একটি বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রভাবিত করার কৌশল নিয়ে কাজ করা একজন ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গে ছিলেন সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের প্রতিনিধি। একটি বিতর্কিত বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও সেখানে ছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভাষ্য, ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যেই ছিল নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করা । ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট হওয়া বৈঠকটি আয়োজন করেছিলেন ব্ল্যাক ওয়াটার নামে পরিচিত বিতর্কিত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের এরিক প্রিন্স। মধ্যপ্রাচ্যের দুই সরকারের পক্ষে কথা বলেছিলেন জর্জ নাদের। তিনি ট্রাম্প জুনিয়রকে জানিয়েছিলেন, যুবরাজরা ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনতে সহায়তা করতে চান। অপর দিকে ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞ জোয়েল জামেল জানিয়েছিলেন, তিনি ট্রাম্পকে নির্বাচনে সহায়তা করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রভাবিত করতে পারবেন। ততদিনে অবশ্য ওই বিষয়ে তিনি কয়েক শ কোটি ডলারের প্রকল্পের খসড়াও করে ফেলেছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করছিলেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তারা, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করার কাজে দক্ষ।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, উপস্থিত ব্যক্তিদের সহায়তার প্রস্তাব পেয়ে ট্রাম্প জুনিয়র তা সঙ্গে সঙ্গেই গ্রহণ করেছিলেন। জর্জ নাদের পরবর্তীতে ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনার ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

ছেলে ও জামাতাকে জড়িয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় ২০ মে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে নিয়ে টুইটর বার্তা লিখেছেন। তার ভাষ্য, ‘বিষয়গুলো হাস্যকর হয়ে উঠছে। ব্যর্থ ও বাজে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি দীর্ঘ ও বিরক্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রাশিয়া ও আমাকে জড়িয়ে কোনও কিছু প্রমাণ করা যাচ্ছে না বলে এখন অন্যদের এর সঙ্গে জড়িয়ে প্রমাণ হাজিরের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ট্রাম্পের ছেলের সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা স্বীকার করে আইনজীবী অ্যালান ফুটারফাস। তবে তিনি দাবি করেছেন, ট্রাম্প জুনিয়র তাদের সহায়তা নিতে আগ্রহী ছিলেন না এবং তাদের যোগাযোগ ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। এদিকে বিশেষ তদন্তকারী মুলার শুধু ওই বৈঠকের পাশাপাশি ২০১৭ সালে সেশেলে হওয়া আরেকটি বৈঠক নিয়েও তদন্ত করছেন। সেখানে জর্জ নাদের ও আবুধাবির যুবরাজের সঙ্গে ছিলেন ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ রুশ ব্যাংকার কিরিল দিমিত্রিভ। সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জর্জ নাদের সে দেশের সরকারের পক্ষে কথা বলার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেউ নন।