যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর গোপন তথ্য চুরি, চীনা হ্যাকারদের দিকে সন্দেহের তীর

চীনা হ্যাকারদের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সঙ্গে জড়িত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। ওই সাইবার হামলায় বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে চুরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর স্পর্শকাতর গোপন তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, চুরি হওয়া ওই বিপুল পরিমাণ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ২০২০ সালের মধ্যে মার্কিন ডুবোজাহাজের জন্য শব্দের চাইতে দ্রুত গতির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরির গোপন পরিকল্পনার তথ্য ছিল সেখানে। সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে।f-nksub-a-20170426-870x549

চীনা হ্যাকাররা এমন একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে তাদের হামলা চালিয়েছিল, যে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাভাল আন্ডারসি ওয়ারফেয়ার সেন্টারের’ জন্য কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব, মার্কিন নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ এবং ডুবোজাহাজে ব্যবহার্য অস্ত্রপাতি উদ্ভাবনে গবেষণা করা। সরকারি সূত্রটি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নাম জানায়নি। চুরি হওয়া ৬১৪ গিগাবাইট তথ্যের মধ্যে রয়েছে ‘সি ড্রাগন’ সাংকেতিক নামে পরিচিত গোপন প্রকল্পসহ নজরদারি তথ্য, ডুবোজাহাজের বেতার যোগাযোগ সংক্রান্ত ক্রিপ্টোগ্রাফিক তথ্য এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ শাখার ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সংক্রান্ত লাইব্রেরি।

‘সি ড্রাগন’ ২০১২ সালে নেওয়া পেন্টাগনের একটি বিশেষ প্রকল্প। মার্কিন সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিকে আধুনিক করে তুলতে ওই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ সংক্রান্ত তথ্য খুবই গোপন, জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটন পোস্টকে শুধু এটুকুই বলেছে, বর্তমানে কার্যকর থাকা একটি যুদ্ধাস্ত্রকে এমনভাবে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল যা বিধ্বংসী সক্ষমতা অর্জন করবে বলে তারা আশাবাদী ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে পেন্টাগন ‘সি ড্রাগনের’ জন্য বছরে ৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ করে আসছিল। এ বছরের সেপ্টেম্বরে সমুদ্রের তলদেশে নতুন অস্ত্রটির পরীক্ষা করার কথা ভেবেছিলেন তারা।

সমর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন এমনিতেই প্রযুক্তিতে এতটাই এগিয়ে গেছে যে সম্ভাব্য সংঘাতের সময়ে চীনের হাত থেকে এশিয়ার বন্ধুদের রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, সাইবার হামলা চালিয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়া চীনের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনারই ফসল। সামরিক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে মলিন করে দিয়ে পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠাই চীনের লক্ষ্য।

এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রযুক্তি চুরি করার অভিযোগ উঠেছে চীনের বিরুদ্ধে। পেন্টাগন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান, অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ‘টার্মিনাল হাই অল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা এবং নৌবাহিনীর ‘লিটোরাল কমব্যাট শিপ’ নামের ছোট যুদ্ধজাহাজের নকশাও হাতিয়ে নিয়েছে চীন।