অভিবাসী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের স্মৃতির প্রতি নিবেদিত প্রদর্শনীর উদ্যোগ

নিউ ইয়র্কে ভারতীয় খাবারকে পরিচিত করে তুলেছিলেন যেসব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীরা তাদের জীবনের অজানা বিভিন্ন দিক তুলে ধরার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার শিল্পী মোহাম্মদ আলী তার ‘নাইটস অফ দ্য রাজ’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে তুলে ধরবেন সেই রেস্টুরেন্ট কর্মীদের জীবনের বিভিন্ন দিক। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ওই প্রজন্মটির করা সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া মোহাম্মদ আলী নিজে একজন ‘অ্যারোসোল আর্টিস্ট’ এবং কিউরেটর।brajesh -1952_Credit_Layla Choudhury_Vivek_Bald

যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আলী বলেছেন, ‘এটা আমার আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের একটি প্রচেষ্টা।’ বার্মিংহামে বড় হয়ে ওঠা আলী স্মৃতিচারণ করতে করতে বললেন, তার নিজের বাবাসহ যত মানুষকে তিনি তখন রেস্টুরেন্টে কাজ করতে যেতে দেখেছেন তাদের কাউকে নিয়ে তিনি খুব একটা গর্বিত ছিলেন না, ‘আমি আসলে তাদেরকে ছোট নজরেই দেখতাম।’

বছর দশেক আগে  তার বাবার মৃত্যু হওয়ার পরে বাংলাদেশি ওই প্রজন্মটি কিভাবে দেশের রন্ধনপ্রণালীকে একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছে সে বিষয়ে তার নতুন উপলব্ধি হয়। তিনি ঠিক করেন, ইংল্যান্ডের কারি শিল্পের ইতিহাসকে তিনি সবার সামনে তুলে ধরবেন। তিনি সবাইকে জানাবেন,  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা কিভাবে স্থানীয়দের কাছে ভারতীয় খাবারকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

এই কাজ করতে গিয়েই তিনি গত বছর প্রথমবারের মতো বার্মিংহামে ‘নাইটস অফ দ্য রাজ’ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। এ বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাস্থল নিউ ইয়র্ক শহরে তার শিল্প প্রদর্শন করবেন। প্রদর্শনীটি ‘মিউজিয়াম অফ ফুড অ্যান্ড ড্রিংকে’ (এমওএফএডি) আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে পরপর তিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন আয়োজিত হবে।

তিনি এমওএফএডির সামনের কক্ষটি ইস্ট ভিলেজের রেস্টুরেন্ট পাড়ার বিখ্যাত মিলন রেস্টুরেন্টের মতো করে সাজিয়েছেন। সেখানে আমন্ত্রিতরা যে শুধু ব্রিটিশ খাবারই খেতে পারবেন তা নয়, বাংলাদেশি বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি বাঙালির রান্না ঘরের নানান পদও চেখে দেখতে পারবেন।

‘আমার মা ইন্টারনেটে সরাসরি এমওএফএডির পাচকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঠিক কিভাবে টেংরা মাছ দিয়ে মিষ্টি কুমড়া রাঁধতে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত আমার আরেক আত্মীয় অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খাবার রাঁধার বিষয়ে সহায়তা করছেন।’

আলী উল্লেখ করেছেন, প্রদর্শনীটি বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষদের অতীত কেমন ছিল তা জানার একটি সুযোগ। এতে সেই সময়কার রেস্টুরেন্টগুলোর এবং সেখানে কর্মরতদের জীবনযাপনের চিত্র ফুটে ওঠা অনেক ছবি সাজানো থাকবে।

তার ভাষ্য, ‘এটি এমন একটি শিল্পকর্ম যেখানে দর্শক নিজেই শিল্পের অংশ হয়ে উঠবেন। আমন্ত্রিতরা একদিকে যেমন দক্ষিণ এশীয় খাবারে স্বাদ পাবেন, অন্যদিকে তেমনি নিউ ইয়র্কে আসা প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের জীবনের গল্প সম্পর্কে জানতে পারবেন।’ আলী মন্তব্য করেছেন, এটি কোনওভাবেই ‘পশ্চিমের সঙ্গে পূর্বের সম্মিলন’ টাইপের কোনও আয়োজন নয়।

শেষে আলী বললেন, ‘আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের খাবারের স্বাদ নিয়েছি। কিন্তু যারা ওই খাবারগুলো তৈরি করেন তাদেরকে আমরা কতটুকু চিনি? আমি বিশ্বকে সেই মানুষগুলো সম্পর্কে জানাতে চাই যাতে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আলাদা করে পরিচিত করিয়ে তুলতে পারি।’