রুশ সংশ্লিষ্টতার নথি ফাঁসের দায়ে মার্কিন কর্মকর্তার পাঁচ বছরের জেল

গোপন নথি ফাঁসের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বৃহস্পতিবার সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত এক কর্মকর্তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। রিয়েলিটি উইনার নামের ওই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির’ (এনেসে) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মকর্তা ছিলেন, যদিও এর আগে তিনি অনুবাদক হিসেবে সরাসরি মার্কিন বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন। উইনার মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে গোপন নথি একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করেছিলেন। অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ায় সরকার পক্ষ তার জন্য পাঁচ বছর তিন মাসের সাজা প্রার্থনা করেছিল আদালতের কাছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উইনারকে দেওয়া সাজাই কোনও মার্কিন ফেডারেল কর্মকর্তাকে নথি ফাঁসের জন্য দেওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ কারাদণ্ড। তাছাড়া, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটাই নথি ফাঁসের দায়ে প্রথম সাজা প্রদানের ঘটনা।এনএসএর সাবেক কর্মকর্তা রিয়েলিটি উইনার

২৬ বছর বয়সী এনএসএ  কর্মকর্তা রিয়েলিটি উইনারকে একটি গোপন নথি ফাঁসের দায়ে গত জুন মাসেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এনএসএতে কর্মরত থাকার সময় রুশ সংশ্লিষ্টতার একটি নথি বিনা অনুমতিতে অফিস থেকে প্রিন্ট করেছিলেন উইনার। প্রিন্ট করা নথিটি নিয়ে তিনি অফিস থেকে বের হন এবং পরে বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্টকে ইমেইলে পাঠিয়ে দেন। ইন্টারসেপ্ট যেদিন ওই নথির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করে তার পরের দিনই গ্রেফতার করা হয় উইনারকে। উইনার বেসামরিক নাগরিক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় নথি ফাঁস করলেও আগে তিনি মার্কিন বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সৈন্যদের বক্তব্য তিনি সরাসরি অনুবাদ করে দিতেন সংশ্লিষ্টদের। উইনার আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ।

ইন্টারসেপ্টের কাছে উইনার যে নথি ফাঁস করেছিলেন তা ছিল মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে। রাশিয়া ভোটিং মেশিনের সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে, এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল ওই নথিতে। এ ঘটনা ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগের, এনএসএর প্রতিবেদনটিতে তারিখ দেওয়া আছে ২০১৬ সালের ৫ মের। পরবর্তীতে গোয়েন্দারা ঠিকই রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। কিন্তু নথি ফাঁসে দায়ে অভিযুক্ত হন উইনার।

অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ায় সরকার পক্ষ আদালতের কাছে অভিযুক্তের জন্য পাঁচ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড প্রার্থনা করে। আদালত সেই সাজা মঞ্জুর করে। উইনারকে দেওয়া সাজাই কোনও মার্কিন ফেডারেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নথি ফাঁসের দায়ে  এ পর্যন্ত ঘোষিত সবচেয়ে দীর্ঘ সাজা। এর আগে এফবিআইয়ের বোমা বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড স্যাক্টলেবেনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

বিচার চলাকালীন উইনারকে এক বছর জেলে থাকতে হয়েছে। উইনারের আইনজীবী আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন, যেহেতু অন্য কোনও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ নেই উইনারের বিরুদ্ধে সেহেতু তাকে যেন জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার পক্ষ আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, অভিযুক্তের দেশত্যাগের আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া তার কাছে আরও গোপন নথি থেকে থাকতে পারে। আদালত সরকার পক্ষের যুক্তি গ্রহণ করেছিল। বিচার চলাকালে সরকার পক্ষ উইনারের নিজের বক্তব্যকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। উইনার একসময় তার বোনের সঙ্গে কথোপকথনে ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমি আমেরিকাকে দিনে না হলেও তিনবার ঘৃণা করি।’