ওয়াশিংটনে ১২ ঘণ্টার কারফিউ, আবারও বৈঠক শুরু

 

ভোট গণনা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের ঘটনায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ১২ ঘণ্টার কারফিউ জারি হয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় এই কারফিউ শুরু হয়েছে, চলবে সকাল ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় শুরু হয়েছে, চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত) । বৃহস্পতিবার  স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার পর ডিস্ট্রিক অব কলাম্বিয়ার (ডিসি) মেয়র মুরিল বসের এই কারফিউ জারি করেন। এদিকে, কারফিউ চলাকালেই হাউস অব কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের সমর্থকদের তাণ্ডবের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া অধিবেশন আবারও শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সময় রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়) অধিবেশন আবারও শুরু হওয়ার কথা।

এদিকে, তাণ্ডবের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ডিসি পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে তার নাম জানানো হয়নি।

সিএনএন জানিয়েছে, কারফিউয়ের ঘোষণা শুনে ক্যাপিটল হিলের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ট্রাম্প সমর্থকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাড়ি ফিরে গেলেও এখনও সেখানে ভোট গণনার দাবিতে বিপুল সংখ্যক সমর্থক রয়ে গেছেন। তারা সেখানে থেকে আবারও ভোট গণনার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। তবে পুলিশ চরমপন্থা অবলম্বন না করে শান্ত রয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে বাড়ি ফেরাতে চাইছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল হিলের সামনে ট্রাম্প সমর্থকদের অবস্থান (ছবি: ডয়েচে ভেলে)

এর আগে তাণ্ডবের ঘটনার পর টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় সমর্থকদের শান্ত থেকে বাড়ি লোর আহ্বান জানান তিনি। তবে পরে টুইটার থেকে তার বার্তাটি মুছে দেওয়া হয়েছে। দাঙ্গা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকায় পরে তার টুইটার অ্যাকাউন্টও ব্লক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ওই তাণ্ডবের পর সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের এমন আচরণে বিস্ময় ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিস্মিত, স্তম্ভিত। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। দাবি বা ভিন্নমতও থাকতে পারে। তাই বলে এমন ঘটনা ঘটে কী করে ? তিনি বলেন,‘এটা  ভিন্ন মত প্রকাশ নয়, এটা আইন হাতে তুলে নেওয়া। এটা বিশৃঙ্খলা। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে এবং এখনই এটা শেষ হতে হবে। আমি আন্দোলনকারীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানচ্ছি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

ট্রাম্পের সমর্থকদের এমন আচরণকে  যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ‘অভূতপূর্ব লাঞ্ছনা’উল্লেখ করে তিনি   দাঙ্গাবাজদের উদ্দেশে বলেন, ‘মনে রাখা উচিত এটা আমেরিকা। এখানে এ ধরনের আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।’ এসময় তিনি সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

তবে এই কারফিউয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া নিয়ে দোদুল্যমান বিক্ষোভকারীদের আবারও একত্রিত  করেছে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ঘোষণা। যদিও ক্যাপিটল হিল খালি করার শর্ত আছে তার বৈঠকে বসার ঘোষণায় তবে টেলিভিশন বিশ্লেষকদের বলতে শোনা গেছে, বিক্ষোভকারীদের ক্যাপিটল ভবনের আশপাশ ছেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আইন প্রণেতাদের এরমধ্য দিয়েই আসতে হবে। তবে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ থাকায় বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করবে না। তবে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের পর কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। এদিকে,  তাণ্ডবের ঘটনার পর ওয়াশিংটনের আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশকে ক্যাপিটল হিল ও আশেপাশের এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে আইনপ্রণেতারা বাইডেনের জয় অনুমোদনের আগেই তাণ্ডবের কারণে আইনপ্রণেতাদের অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রথা অনুযায়ী ইলেকটোরাল কলেজে বিজয়ী প্রেসিডেন্টের ভোট পার্লামেন্টে প্রত্যয়ন করতে হয়। এমনকি ভোটের সংখ্যা নিয়ে কোনও জটিলতা হলে পুর্নগণনার সিদ্ধান্তও নেওয়া যায় পার্লামেন্টের এই বিশেষ বৈঠকে। ভাইস প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করে থাকেন। সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হওয়ায় আজ এই প্রথাগত বৈঠকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী করার কথা। তবে এখনও নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়া রিপাবলিক্যান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে থেকেই এই দিনে পুনরায় ভোট গণনার দাবি তোলেন। ৭ জানুয়ারি বুধবার রাতে শুরু হওয়া সেই বৈঠকের মধ্যেই ট্রাম্পের সমর্থকরা হঠাৎ করেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান এবং ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে ঢুকে যান। সেখানে তাদের জানালা ভাঙতেও দেখা যায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।  এসময় নিরাপত্তা বাহিনী বাধ্য হয়েই গুলি চালালে এক নারীসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এরমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। ওই তাণ্ডবের সময়ে ট্রাম্পের কয়েকজন সমর্থককে ক্যাপিটল হিলের চুড়ায় উঠে বসে থাকতেও দেখা গেছে।     

বিক্ষোভের নামে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের এমন আগ্রাসী তাণ্ডবের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন (ইউএস ক্যাপিটল) অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ।

আরও পড়ুন:

ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক

অবরুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন, গোলাগুলি ও ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডব

বাইডেনের জয় অনুমোদন হয়নি, ‘শান্তির স্বার্থে’ সমর্থকদের ঘরে ফিরতে বললেন ট্রাম্প