ধর্ষণ মামলায় শিগগিরই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ট্রাম্পকে?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন লেখিকা ই জিন ক্যারলের করা ধর্ষণ মামলা সচল করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন আইনজীবীরা। ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্ট পদে বহাল না থাকায় মামলায় গতি আসবে বলে আশা করছেন তারা। আর সেটা হলে শিগগিরই হয়তো আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ট্রাম্পকে। শপথবাক্য পাঠ করে অভিযোগের বিরুদ্ধে জবাব দিতে হবে তাকে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে।

নারী স্বার্থরক্ষায় এবং নারী অধিকার নিয়ে মার্কিন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির জন্য জনপ্রিয় ক্যারল। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে তার অনেক লেখা বিভিন্ন সময়ে সমাদৃত হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘হোয়াট ডু উই নিড মেন ফর? অ্যা মোডেস্ট প্রপোজাল’ নামক বইতে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন। তার দাবি, ৯০ এর দশকে ম্যানহাটনের একটি শপিং মলের ড্রেসিং রুমে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান ট্রাম্প। তবে ক্যারলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে তখনই তা নাকচ করে দিয়েছিলেন এ রিপাবলিকান নেতা। তার দাবি ই জিন ক্যারল নামের ওই লেখিকার সঙ্গে তার জীবনে দেখাই হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেন ই জিন ক্যারল। এর মধ্যে একটি যৌন নিপীড়নের মামলা এবং আরেকটি মানহানির মামলা।

ট্রাম্প তখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত থাকায় মামলার বিচারকাজে গতি ছিল না। কারণ তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে আইনজীবীদের যুক্তি ছিল– দায়িত্বের চাপে ট্রাম্প এ মামলায় নিয়মিত অংশ নিতে পারছেন না। এরইমধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়েছে ট্রাম্পের। ক্যারলের আইনজীবীরা ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে আবারও তৎপরতা শুরু করেছেন। মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক কৌঁসুলি জেনিফার রজার্জস বলেন, এই মামলা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব। কাজেই বিচারকদের মধ্যে এখন সেই বোধ আসবে যে মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এখনই। কারণ ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই।

ক্যারল নিজেও আশাবাদী যে এ বছরেই মামলার নিষ্পত্তি হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর নিউইয়র্ক সিটিতে সফরকালে  ক্যারোল বলেছিলেন, এক ফ্যাশন ডিজাইনারকে সাথে নিয়ে তিনি শপিং করেছেন। বিশেষ সে দিনটির জন্য একটি পোশাক কিনেছেন যে দিনটিতে তিনি তার যৌন নিপীড়নকারীর মুখোমুখি হবেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি ক্যারল বলেন, ‘আমি সেই মুহূর্তের জন্য বেঁচে আছি, যখন তার কাঠগড়ার পাশে আমি হাঁটাহাঁটি করব। রোজই আমি এটি ভাবি।’

ক্যারলের দাবি অনুযায়ী, ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের শেষের দিকের বা পরের বছরের শুরুর দিকের। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই শপিং মলে একটি টিভি শো-এর সঞ্চালনা করছিলেন তিনি। শো শেষ হওয়ার পর শপিং মল বন্ধ হওয়ার মুখে তিনি ট্রাম্পের কাছে যেতেই ট্রাম্প তাকে চিনতে পারেন। তাকে বলেন, ‘আপনি তো সেই উপদেশ দেওয়া নারী।’

ক্যারল বলেছেন, কোনও এক নারীর জন্য উপহার কিনতে সাহায্য করার জন্য তার কাছে আর্জি জানান ট্রাম্প। তার পর ক্যারল সেই নারীর বয়স জিজ্ঞেস করেন। ট্রাম্প তা না জানিয়ে উল্টো ক্যারলের বয়স জিজ্ঞেস করেন। ক্যারল নিজের বয়স ৫২ বছর বলার পর ট্রাম্প তাকে বলেন, ‘আপনি অনেকটাই বয়স্ক।’ সেই সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৪৯ বছর।

ক্যারলের দাবি, উল্লিখিত নারীর উপহার কেনার নাম করে ট্রাম্প তাকে মলের উপরের তলায় একটি অন্তর্বাসের দোকানে নিয়ে যান। সেই সময় যেহেতু শপিং মল বন্ধ হচ্ছিল, তাই ওই এলাকায় কোনও লোকজন ছিল না। আর সে সুযোগ নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছিলেন ট্রাম্প।