তেলের দাম: শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সমঝোতা

কয়েক সপ্তাহ ধরে তেলের উচ্চমূল্য নিয়ে বৈরিতার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আতঙ্কে চাহিদা হুমকির মুখে পড়লেও ওপেকপ্লাস জোট উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে।

সৌদি আরব ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাস গোষ্ঠী জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারকে বিস্মিত করেছে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে ভাইরাসের কারণে তেলের দরপতন হলেও উৎপাদন বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেওয়া হলো। অবশ্য গোষ্ঠীটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছে। তারা বলেছে, সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীরা আবার যেকোনও সময় বৈঠকে বসে পরিস্থিতি অনুসারে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবেন।

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক সপ্তাহের কূটনৈতিক টানাপড়েনের পর এই সমঝোতা হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মূল্য কমাতে আরও বেশি উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওপেক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই আহ্বানের বিরোধিতা করা হচ্ছিল। এই সপ্তাহে উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের আলোচনার ফলাফল তেলনীতি ছাড়িয়ে গেম-চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে বৈঠক সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। কোনও পক্ষই বৈঠকে ঐকমত্যের বিষয় সম্পর্কে খোলাখুলি কিছু বলেনি।

মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জ্বালানি কূটনীতিক আমস হখস্টেইন ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ক উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দালিপ সিং। গত সপ্তাহে আমস বলেছিলেন, উভয় দেশ জ্বালানি স্থানান্তরে অংশীদার এবং ২১ শতকের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি অবকাঠামোতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধি দল সৌদি আরবের কোন পর্যায় পর্যন্ত বৈঠক করেছে তা স্পষ্ট নয়। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুধু সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তেলনীতি ছাড়াও ইরান এবং ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে উভয় দেশের স্বার্থের জায়গা ভিন্ন।

গত মাসে মার্কিন মজুত থেকে লাখ লাখ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ছাড়ের বাইডেনের নির্দেশের পর সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। ওপেক প্রতিনিধিরা হুঁশিয়ারি জানিয়ে তখন বলেছিলেন, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা তেলের মূল্য বাড়াতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্র ওপেক প্লাসের তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। হোয়াইট হাউজের নারী মুখপাত্র জেন সাকি বৈঠকের পর বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহ আমাদের অংশীদার সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও ওপেক প্লাস উৎপাদনকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়কে আমরা স্বাগত জানাই, যা তেলের দামের চাপ মোকাবিলায় সহযোগিতা করেছে।