শিগগির বদলাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক আইন

টেক্সাসের একটি স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনায় ফের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক আইন। মঙ্গলবারের (২৪ মে) ওই হামলায় ১৯ শিক্ষার্থীসহ ২১ জন নিহত হয়। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের বরাত দিয়ে ২০২২ সালে এ পর্যন্ত ২১২ দফায় মাস শ্যুটিং বা নির্বিচারে গুলিবর্ষণের কথা জানিয়েছে সিএনএন। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুল।  

সিএনএন জানিয়েছে, ২০২২ সালে দেশটির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমপক্ষে ৩৯টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন মারা গেছে এবং ৫১ জন আহত হয়েছে।

অ্যাসল্ট রাইফেল বা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগজিনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বন্দুক আইন সংশোধনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল পর্যায়ে বেশ কিছু প্রতিকূলতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্তভাবে আইন প্রণয়নের মতো সমঝোতা বা ঐকমত্য ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক এবং বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে এখনও পর্যন্ত নেই।

ফাঁকফোঁকর বন্ধ করা

প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য দক্ষিণ ক্যারোলিনার ডেমোক্র্যাটিক দলীয় একজন রাজনীতিক জিম ক্লাইবার্ন। তার উদ্যোগে প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া একটি বিল এইচআর ১৪৪৬; যা ‘চার্লেস্টন লুফহোল’ নামে পরিচিত। এতে চলমান আইনের একটি ফাঁক বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। যা ফাঁক গলে অস্ত্র ক্রেতা সম্পর্কে তথ্য যাচাই করার আগে বন্দুক বিক্রির সুযোগ রয়েছে। 

নির্দিষ্টভাবে এই বিলটি আইনে পরিণত হলে অস্ত্র কিনতে তিনদিনের বদলে ন্যূনতম দশ কর্মদিবস অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ে অস্ত্র ক্রেতার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার জন্য বিক্রেতাকে অপেক্ষা করতে হবে।

এই ফাঁক ব্যবহার করে ২০১৫ সালে একজন শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনে কৃষ্ণাঙ্গদের একটি ঐতিহাসিক চার্চে ৯ জনকে হত্যা করার জন্য বৈধ প্রক্রিয়ায় আইনগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে সমর্থ হয়েছিল।

ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটররা মঙ্গলবার রাতে ভোটাভুটির তালিকার অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০২১ সালের ‘এনহান্সড ব্যাকগ্রাউন্ড চেকস অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত একটি বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নেয়। যাতে প্রস্তাবটি ভোটাভুটির তালিকায় আসে। তবে কবে এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে পারে অনিশ্চিত। এক্ষেত্রে বিলটি নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন অন্তত ৬০ জন সিনেটরের সমর্থন। এটি স্পষ্ট যে বর্তমানে এই সংখ্যক সমর্থন বিলটির পক্ষে নেই। এমনকি ডেমোক্র্যাটিক দলের সব সিনেটরও বিলটিকে সমর্থন করছেন না।

কানেকটিকাটের ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল। প্রায় ১০ বছর আগে তার রাজ্যে স্যান্ডি হুকের গুলিবর্ষণের পর থেকে তিনি বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পাস হতে ব্যর্থ হলেও ভোটাভুটি হওয়া উচিত।

রিচার্ড ব্লুমেন্থাল বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যকে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের ভোট দিতে হবে যাতে জনগণ আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে।’

দ্বিদলীয় সমর্থন নিয়েও সিনেটে আটকে যায় অনেক বিল

‘বাইপার্টিজান ব্যাকগ্রাউন্ড চেক অ্যাক্ট বা এইচআর ৮, ২০২১’ শীর্ষক আরেকটি বিলেও আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে লাইসেন্সবিহীন এবং ব্যক্তিগত বিক্রেতাদের বন্দুক বিক্রি এবং স্থানান্তরের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের প্রয়োজন নেই।

এইচআর ৮ বিলটিতে দ্বিদলীয় সমর্থন রয়েছে। গত বছর ২২৭-২০৩ ভোটে প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হয়। আট জন রিপাবলিকান বিলটিতে সমর্থন দেন এবং একজন ডেমোক্র্যাট এর বিপক্ষে ভোট দেন।

মঙ্গলবার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর জো মানচিনকে এই বিস্তৃত পরিধির বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নিজের কম বিস্তৃত ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের বিলটির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যদি মানচিন-টুমি পাস না হয় তাহলে এমন কিছুর জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন কীভাবে পাবেন?’

২০১৩ সালে মানচিন ও রিপাবলিকান সিনেটর প্যাট টুমি একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন। এটিউ মানচিন-টুমি নামে পরিচিত। এতে সব বাণিজ্যিক (অস্ত্র প্রদর্শনী ও ইন্টারনেটসহ) অস্ত্র বিক্রিতে ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এতে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের মধ্যে এই যাচাই ছাড়া অস্ত্র বিক্রির সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন থাকলেও এই বিলটি সিনেটের ফিলিবাস্টার বিধির আওতায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বিলটি নিয়ে বিতর্ক বন্ধের ভোটাভুটিতে ৫৪-৪৬ ভোটে হেরে যায়। অবশ্য মানচিন বিলটি পাসের জন্য এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

রিপাবলিকানদের যুক্তি হলো, ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের ফলে বন্দুকের অধিকার খর্বিত হবে, শেষ পর্যন্ত অস্ত্র রাখার অধিকার থাকবে না। মঙ্গলবারই টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা ও মিডিয়ার অনেক মানুষ তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে আইন পালনকারী নাগরিকদের অস্ত্র রাখার সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলছে।

রিপাবলিকানরা আরও যুক্তি তুলে ধরে বলবে, এই বিল সব গুলিবর্ষণের ঘটনা বন্ধ করবে না। এটি সত্য। প্রতিটি গুলিবর্ষণের প্রেক্ষাপট আলাদা। এটি জানার সুযোগ এখনও হয়নি যে বিলটি যদি পাস হতো তাহলে মঙ্গলবারের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঠেকানো যেত কিনা।  

আপাতত, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আইনে ভিন্নতা রয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বেশিরভাগ পদক্ষেপ অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নেওয়া হচ্ছে। কারণ ওয়াশিংটন এটিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে।

সূত্র: সিএনএন