যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে আগুন বোমা নিক্ষেপ, আহত ৮

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বোল্ডারে ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে আগুন বোমা নিক্ষেপ করেছেন এক ব্যক্তি। এতে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে। রবিবার (১ জুন) দুপুরে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছিল। ওই সময় ভিড়ের মধ্যে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ বলে চিৎকার করে আগুন বোমা নিক্ষেপ করেন ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

ডেনভার ফিল্ড অফিসের এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট ইন চার্জ মার্ক মিচালেক জানান, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে এটি একটি লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতা এবং আমরা এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত করছি।’

তিনি আরও জানান, ৮ জন আহত ব্যক্তির বয়স ৬৭ থেকে ৮৮ বছরের মধ্যে। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে।

মিচলেক হামলাকারীর নাম মোহামেদ সোলাইমান বলে উল্লেখ করেন। হামলার পরপরই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে তার বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এফবিআইয়ের প্রধান ক্যাশ প্যাটেলও  ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কলোরাডোর বোল্ডারে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে অবগত এবং ঘটনাটির আদ্যোপান্ত তদন্ত করে দেখছি।’

কলোরাডোর অ্যাটর্নি জেনারেল ফিল উইসার বলেন, যেহেতু হামলার লক্ষ্যবস্তু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, তাই এটি একটি বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে মনে হচ্ছে।

বোল্ডার পুলিশের প্রধান স্টিফেন রেডফার্ন বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে একমাত্র সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।’

এই হামলাটি পিয়ার্ল স্ট্রিট মলে ঘটে। এটি ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর পাশে একটি জনপ্রিয় কেনাকাটার স্থান। সেখানে ‘রান ফর দেয়ার লাইভস’ নামক একটি সংগঠন ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করছিল।

সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে তারা প্রতি সপ্তাহে এই ধরনের কর্মসূচি পালন আসছে। এবারই প্রথম সেই কর্মসূচিতে কোনও সহিংস ঘটনা ঘটল।

হামলাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চরম উত্তেজনা চলছে। এই যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিদ্বেষমূলক অপরাধ যেমন বেড়েছে, তেমনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইসরায়েলপন্থি রক্ষণশীলদের একাংশ ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকে ইহুদি বিদ্বেষ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ট্রাম্পের প্রশাসন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করেছে। এমন বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, এমন মার্কিন অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল বন্ধ করেছে।

এক্সে ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার বলেন, সোলাইমান ওভারস্টে (মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও) ভিসা নিয়ে থাকছিলেন। আগের প্রশাসন তাকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল।

রয়টার্স স্বাধীনভাবে তার অভিবাসন অবস্থান যাচাই করতে পারেনি।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গায়ে শার্ট না থাকা এক ব্যক্তি দুই হাতে স্বচ্ছ স্প্রে বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার সামনে ঘাসে আগুন জ্বলছে।

ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়—‘জায়নবাদীরা নিপাত যাক’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘তারা খুনি’। লাল টি-শার্ট পরা কয়েকজনের দিকে তাকিয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন, যাঁরা মাটিতে পড়ে থাকা একজনের শুশ্রূষা করছিলেন।

কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ব্রুক কফম্যান জানান, তিনি ঘটনাস্থলে চারজন মহিলাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছেন, যাদের পায়ে আগুনে পোড়ার চিহ্ন ছিল।

এই হামলার এক মাস আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ইসরায়েলি দূতাবাস কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।