কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করে দেন। শুক্রবার (২৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কানাডার কর নীতিকে ‘স্পষ্ট হামলা’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা বন্ধ করেন তিনি। এসময় ট্রাম্প জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কানাডার পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ করা হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় ট্রাম্প এই পদক্ষেপের কথা জানান। প্রতিবেশী দুই দেশ জুলাইয়ের মাঝামাঝি একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।

এর আগেও এই দুই দেশ একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। কারণ ট্রাম্প এ বছর শুরুর দিকে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন এবং ‘অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ’ করে কানাডা দখলের হুমকি দেন।

সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমরা কানাডার সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য আলোচনা অবিলম্বে বন্ধ করছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে কী শুল্ক দেবে, তা আমরা জানিয়ে দেব।’

সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, আলোচনা চলতে থাকবে। আমরা কানাডিয়ানদের সর্বোত্তম স্বার্থে এই জটিল আলোচনাগুলো চালিয়ে যাব।’

কানাডার ৩ শতাংশ ডিজিটাল পরিষেবা কর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের একটি প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর চালু হওয়া পরিষেবার প্রথম কর প্রদানের সময়সীমা সোমবার।

ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো অনুমান করছে, এই করের কারণে অ্যামাজন, অ্যাপল এবং গুগলের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলোর বার্ষিক ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হবে।

কানাডীয় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এই বিষয়টি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় সমাধান করতে চেয়েছিলেন।

নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কার্নি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে গড়ে ওঠা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে আশা করা হয়েছিল যে আলোচনা এগোবে।

কিন্তু ট্রাম্পের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ চুক্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যদিও অতীতে ট্রাম্প অনেকবার আলোচনার চাপ বাড়াতে বা স্থবির আলোচনা গতিশীল করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন হুমকি দিয়েছেন।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক ফেলো ইনু মালাক বলেন, ট্রাম্পের হুমকি তার পরিচিত কৌশলের অংশ—চাপ বাড়ানোর চেষ্টা। তবে এটা দেখায়, তিনি এবার কানাডার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন, যা একটি চুক্তির সুযোগও তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র কানাডার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর কানাডা ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, যা দীর্ঘদিনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আসে।

কিন্তু এ বছর ট্রাম্প মাদক পাচারের অজুহাতে নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা এই বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, গাড়ির যন্ত্রাংশ একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার সীমান্ত পার হয় গাড়ি পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগে, ফলে এসব শুল্ক সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

পরবর্তীতে ট্রাম্প কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক থেকে ছাড় দেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দেয়। এর জবাবে কানাডাও কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।

শুক্রবার ট্রাম্পের আলোচনার ইতি টানার ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার পড়ে যায়। তবে পরে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায় এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ রেকর্ড উচ্চতায় বন্ধ হয়।