আজ (১০ সেপ্টেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে প্রতিবছর দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ বলছে, দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা কমেছে। তবে পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে নারী ও তরুণ-তরুণীরা বেশি আত্মহত্যা করছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, উপমহাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৯৪ জন, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১২৯ জন, ২০১২ সলে ১০ হাজার ১৬৭ জন, ২০১১ সালে ১০ হাজার ৩২৩ জন এবং ২০১০ সালে ১০ হাজার ৭৮৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। অপরদিকে, বিশ্বে প্রতিবছর আত্মহত্যা করেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। বাংলাদেশে গত সাত বছরে ৭৩ হাজার ৩৮৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগেরই বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ‘শিশুবর্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আত্মহত্যা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আত্মহত্যার উপকরণ সহজলভ্য না হওয়ায় এ প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। তবে এ বিষয়ে আরও জনসচেতনতা জরুরি।’
আত্মহত্যার ধরন এবং কারণে পরিবর্তন এসেছে বলেও জানান ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ অতি তুচ্ছ কারণেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এখন পোশাক না পেয়ে, টিভিতে পছন্দের চ্যানেল দেখতে না পেয়েও অনেকে আত্মহত্যা করেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ বিভাগের একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বলা চলে প্রতিদিনই আত্মহত্যার কেস (ঘটনা) পাই।’ এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘নারীদের ওপর শারীরিক ও যৌন এবং মানসিক নির্যাতন বেড়েছে। যৌন নিপীড়নও ঘটছে ব্যাপকভাবে। এতে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সর্ম্পক স্থাপনে বাধ্য হওয়া কিংবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণেও অনেক নারীই আত্মহত্যা করেন।’ তিনি বলেন, এ প্রবণতা রোধে সরকার, সংবাদমাধ্যম ও পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রবণতা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।
/জেএ/এআরএল/এবি/
আরও পড়ুন
জলির জন্য কান্না