ঈদে ডাক্তার নেই, রোগীও নেই হাসপাতালে


ঢাকা মেডিক্যালের ফাঁকা জরুরি বিভাগের সামনের অংশঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্স, রোগীদের নিয়ে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, রোগীর স্বজনদের কোলাহল, আহাজারি, মানুষ সরিয়ে জায়গা খালি করতে নিরাপত্তারক্ষীদের বাঁশির আওয়াজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে বছরের দুই ঈদে এ চিত্র একেবারে অনুপস্থিত। আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঈদুল আজহার দিনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
মঙ্গলবার চিরচেনা কোলাহলমুখর ঢামেক হাসপাতাল দেখা গেছে একেবারে নীরব, আর হাতেগোনা যে কয়েকজন এসেছেন, তারাও একেবারে বাধ্য হয়ে এসেছেন। রোগীদের অভিযোগ, ঈদের সময় ডাক্তারদের হাসপাতালে পাওয়া যায়না। এ কারণে ঈদের আগে অধিকাংশ রোগীরা হাসপাতাল থেকে চলে যান আবার ঈদের পরে আসেন। যদিও চিকিৎসকরা এ যুক্তি মানতে নারাজ।
এদিকে, ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঈদের আগের দুদিন ও ঈদের দিন ছাড়া এর পরেরদিন সরকারি হাসপাতাল সীমিতভাবে খোলা রাখা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, ডাক্তার, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স এবং মেডিক্যাল টিমসহ প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ও পঙ্গু হাসপাতালসহ প্রতিটি হাসপাতালেই রোগীর সংখ্যা হাতেগোনা। রোগী ও স্বজনরা জানান, এসময়টাতে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিই রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ফাঁকা চেয়ার তৃতীয় ও চতুর্থ তলার যেখানে ফ্লোরে রোগীরা শুয়ে থাকেন, সেখানে আজ অনেক বেডও (বিছানা) ছিল শূন্য। একই চিত্র হাসপাতালের শিশু ও নারী ওয়ার্ডেও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাদের ঈদের ডিউটি ছিল, তারা সবাই আছেন। আর অনেকেই আছেন যারা অনকলে থাকেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. জেসমিন নাহার রুনি বলেন, ‘যেকোনও জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতাল থেকে ডেকে পাঠালে আমরা হাজির হই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত পরশু থাইক্যা ডাক্তররা আসে না। সিস্টাররাও আসে না। তাগোরে ডাইক্যাও পাইতাছি না। আমারে আগে একজন বলছিল এই কথা। বলছিল, বাড়ি চইল্যা যাইয়া ঈদের পরে আবার আসতে। কিন্তু আমার স্বামী গুরুতর অসুস্থ বইল্যা বাড়ি যাই নাই। এখন দেখতাছি, তার কথা শুনলেই ভালো হইতো।’
হাসপাতালে ডাক্তার নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও দুজন রোগীর স্বজন বলেন, ঈদের সময়টাতে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসকরা একেবারেই আসেন না।
সুনসান নীরবতা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেঅপরদিকে, শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের সময়টাতে এমনিতেই রোগীর সংখ্যা কমে যায়। আর এবার ঈদের দিনে প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়াতে রোগীর সংখ্যা একেবারেই কম। ঈদের দিন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র পাঁচজন রোগী। গতকাল সোমবার ভর্তি হয়েছিলেন ১২ থেকে ১৩ জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একেবারে জীবন সংকটাপন্ন না হলে এবারে হাসপাতালে কেউ আসেননি। আর অনেক রোগী এ সময় বাড়ি চলে যান। সে কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম থাকে।’
হাসপাতালের রোস্টারে থাকা সব চিকিৎসকরাই ডিউটিতে আছেন জানিয়ে ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ‘যাদের ডিউটিতে থাকার কথা, তারা হাসপাতালে আছেন। নিজের দায়িত্ব তারা ঠিকমতোই পালন করছেন। আর জরুরি প্রয়োজন হলে অনকলে থাকা চিকিৎসকরাও এসে হাজির হবেন।’
এদিকে, হাসপাতালের এক রোগী অভিযোগ করেছেন, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই ডাক্তারের সংখ্যা কমে গেছে।
/জেএ/এমডিপি/এবি/

আরও পড়ুন
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন আপদ পশুর রক্ত