মুক্তামনির রোগ নিয়ে চলছে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও তাকে দেখতে কেবিনে ঢুকছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। রবিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার খোঁজ নিতে গিয়ে চোখে পড়লা এমন চিত্র। এই কৌতূহল নিয়ে সে কিছুটা বিরক্ত। তবুও কেমন আছো জানতে চাইলে মুখে হাসি এনে সাতক্ষীরার ১১ বছরের মেয়েটি বললো, ‘ভালো আছি। ডাক্তাররা বলছেন আমি ভালো হয়ে যাবো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সুস্থ হতে পারি। তখন লেখাপড়া শিখবো, সাংবাদিক হবো।’
এর মধ্যে মুক্তামনির যমজ বোন হীরামনি বেডের পাশে হাজির হলো একটি ব্যাগ নিয়ে। এর মধ্য থেকে সে একে একে বের করলো নেইলপলিশ, লিপস্টিক, চুলের বিভিন্ন রঙের ব্যান্ড, হেয়ার ক্লিপ, ব্রেসলেটসহ নানান কিছু। মুক্তামনির লিকলিকে বাঁ-হাতে সেগুলো পরিয়ে দিতে থাকে হীরা। লাল রঙের ব্রেসলেট পরানোর পর সে হীরাকে বলে, ‘এটা না, নীল রঙেরটা বের করো আপা।’ যমজ হলেও তারা একে অপরকে আপা ডাকে বলে জানালেন মা আসমা খাতুন।
বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সাতক্ষীরার মুক্তামনি এখন সবার মনোযোগের কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, এজন্য মেয়েটি ধন্যবাদ জানাতে ভোলেনি তাকে। পাশে বসা মুক্তামনির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে সুস্থ হবে এ আশাই কোনোদিন করিনি। কিন্তু সাংবাদিকদের নজরে আসায় আজ আমার মেয়ে এখানে। দেশের সেরা ডাক্তাররা আমার মেয়েকে দেখছেন। তারা বলছেন, আমার আম্মুজান সুস্থ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন আমার মেয়ের। সবই আপনাদের কল্যাণে। আমি চাই, আমার দুই মেয়েও লেখাপড়া শিখে এমন সাংবাদিক হোক। আমার মতো হাজারও অসহায় বাবার পাশে তারা দাঁড়াক, মানুষের কল্যাণে আসুক’— বলতে বলতে চোখ মোছেন ইব্রাহীম হোসেন।
গত ১২ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তির পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা চারটি রোগের কথা ধারণা করলেও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে লিমফেটিক ম্যালফরমেশন রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি। এটি একটি জন্মগত রোগ (কনজিনেটাল ডিজিস)। এর বিশেষত্ব হচ্ছে জন্মের পরপরই কিছু ক্ষেত্রে এর প্রকাশ পায় কারও ক্ষেত্রে, আবার কারও ক্ষেত্রে পায় না।
তবে মুক্তামনি এতদিন অবহেলা আর অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে বলে পরিবার এবং চিকিৎসকদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে। অবশ্য দেরিতে হলেও চিকিৎসকরা এখন বলছেন, তারা আশাবাদী। দীর্ঘমেয়াদী এক চিকিৎসার পরে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
/জেএইচ/