আজিমপুর নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছয় মাসের মালিহাকে টিকা দিতে নিয়ে এসেছেন মা সুরাইয়া বেগম। কেন্দ্রের রিসেপশনিস্ট সেলিনা আক্তারকে কার্ড এগিয়ে দিতেই তিনি শিশুর নাম এবং বয়স খাতায় এন্ট্রি করে মালিহাকে টিকা নেওয়ার জন্য নির্ধারিত রুমে পাঠালেন। এর আগে শিশুটি কেমন আছে জানতে চাইলেন। গতকাল সোমবার আজিমপুর নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। যারা নিয়মিত এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান তাদেরও এই হাস্যোজ্জ্বল দৃশ্য চোখে পড়ে। নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি হাসিমুখেই কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই কর্মীরা। কিন্তু এর আড়ালেই রয়েছে চাপা কষ্ট। ছয় মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারাদেশের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এই অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে মোট ২৫টি মাতৃসদন, ১৩৮টি প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার ও ২৭৬টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কর্মীরা সবাই বেতন বঞ্চিত।
এই প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় পরিচালিত হয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (সিডা) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করে থাকে। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাউন্সিলিং সুবিধাসহ রয়েছে সাধারণ রোগের চিকিৎসা সেবার সুযোগ। আশপাশের এলাকার মায়েরাও এসেছেন তাদের সন্তানদের টিকা দিতে।
আজিমপুর ও হাজারীবাগের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া, চল্লিশ টাকা টিকিটের বিনিময়ে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ পান রোগীরা। এছাড়া হাজারীবাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে এক হাজার টাকার বিনিময় গর্ভবর্তী মায়ের সিজার/ডেলিভারি সুবিধা।
আজিমপুর নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাউন্সিলর হাবিবা সুলতানা বলেন, ‘আমরা গত বছর বর্ধিত বেতন পেয়েছি। সেই বেতন দিয়ে আমাদের চলে যাচ্ছে। আশা করছি দ্রুত আমরা নিয়মিত বেতন পাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বেতন সিডা ও এডিবির ফান্ড থেকে হয়। এডিবির ফান্ড পাওয়ার পর আমরা কর্মীদের বেতন দিয়েছি। সিডার ফান্ডটা পেলে বাকি টাকা দিয়ে দেবো। আমরা বেতন না পাওয়ার পর বছর খানেক আগে আমাদের বর্ধিত বেতন হয়। সেই টাকাটা দিয়ে আমরা এই ক্রাইসিসের সময়টা পার করেছি। সিডার ফান্ডটা চলে এলে আর সমস্যা থাকবে না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) শেখ সালাহ্উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কর্মীদের বেতন ওই প্রকল্প থেকেই হয়। আমরা শুধু তাদের কাজগুলো দেখভাল বা তদারকি করে থাকি। সুতরাং বেতন-ভাতার বিষয়ে আমাদের কোনও দায় নেই।’
জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে হাজারীবাগ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র/মাতৃসদনটি পরিচালিত হয়। এর মোট সাতটি কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলো হলো হাজারীবাগ নগর মাতৃসদন, কালনগর প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার (পিএসিসি)-১, আজিমপুর পিএসিসি-২, শহীদনগর পিএসিসি-৩, শহীদনগর বউবাজার পিএসিসি-৪, বকশিবাজার পিএসিসি-৫ ও ইসলামবাগ পিএসিসি-৬। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে ৩২টি ওয়ার্ডে ২৮টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কর্মীদের মধ্যে বেতন নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। কেননা, প্রতি ৫ বছর পরপর টেন্ডার হয়। তারপর সবচেয়ে কম বাজেটধারী টেন্ডার পায়। এতে কখনও কখনও ৫ বছর ভালো বেতন পাওয়ার পর বেতন কমে যায়।