নিতে চায় না কেউ, তবুও বিদেশে চিকিৎসায় আগ্রহী আবুল বাজানদার

nonameকর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার প্রায় আটমাস পর আবারও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফিরেছেন ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজানদার। গত সপ্তাহে হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এই আটমাসে তার হাতে পায়ের ‘শেকড়’ আরও বেড়ে গেলেও ঢাকা মেডিক্যালে আর অস্ত্রোপচারে আগ্রহী নন তিনি। এখন দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে বাজানদার এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গেলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে একথা বলেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আবুল বাজানদারের রোগ নিয়ে আলোচনা হলেও তাকে নিতে আগ্রহ দেখায় নি কেউ।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে হাতে পায়ে গাছের মতো অস্বাভাবিক শেকড় নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম ভর্তি হন আবুল বাজানদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার চিকিৎসা শুরু হয়। থাকা-খাওয়া, ওষুধ, অপারেশনসহ যাবতীয় খরচ বহন করার পরও গত বছরের ২৬ মে কাউকে কিছু না জানিয়েই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজানদার। গত সপ্তাহে হাসপাতালে ফিরে আসেন তিনি।

আগে যখন আবুল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তখন তাকে পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী এবং কাজী বাহার। তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে জানান আবুল। অসুস্থ থাকা অবস্থায় কাজী বাহার প্রতিদিন তাকে হাসপাতালে দেখতে আসত, এখন বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই উল্লেখ করে আবুল বলেন, বারী ভাই বাহার ভাইকে নিষেধ করেছে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। আবুল বাজানদার বলেন, আমি এখানে চিকিৎসা বিষয়ে সেন স্যারের (ডা. সামন্তলাল সেন) সাথে কথা বলি। আর কারো সাথে কথা হয়না।

বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজানদার বাড়ি যাবার পর অন্তত ২০ বার আমাকে ফোন করেছে। যতবার ফোন করেছে আমি তাকে আসতে বলেছি। সে আসেনি। এরপর যখন সে এসেছে তার এটা বড় হয়ে গেছে। বাজানদার এখানে আসার পরে আমরা বোর্ডে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমর অপারেশন করব। গত শনিবারে করার কথা ছিল। সে রাজি হয়নি’।

আবুল বাজানদারের মা আমেনা বিবি ছেলের চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলেন, ওর ২৫টা অপারেশন হয়ে গেছে কোন ফয়সালা হয়নি। ডাক্তাররা বলেছে কোনভাবে সুস্থ হবেনা। সে কারণে আমি বাইরে চিকিৎসা চাচ্ছি। 
আবুল বাজানদার বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য কোথায় যাব সেটা বলিনি। যেন বাইরে চিকিৎসা হয় সেটার জন্য বলেছি। উনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্য আবেদন করছি। 

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘গত দুই/তিন বছর আমি বাজানদারকে নিয়ে কাজ করছি। বিদেশ থেকে বহু মিডিয়া, বহুজনে আমাকে ইমেইল করেছে, অনেকেই অনেক ভাল বলেছে কিন্তু কেউ তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার কথা বলেনি। আমি ওর বিদেশ যাওয়া নিয়ে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওইদেশের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি আছে। আমি বলেছি, বাজানদারকে নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করব। ওরা আমার কাছে কাগজপত্র চেয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এখনও দেয়নি। সুতরাং সিঙ্গাপুরও যে খুব আগ্রহী সেটা বলা যাবেনা। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাও আমাকে বলেছে রোগীটার এখন সেভ করা দরকার এবং তার কোন ক্যান্সার আছে কিনা সেটা দেখা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘ওর চিকিৎসা আসলে নেই। ওর এগুলো সেভিং করে ফেলে দিতে হবে। একসময় এটা ফেলে দিতে দিতে এটা কমে আসবে।’ 
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারি অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ হিমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবুল বাজানদার প্রথম দিন হাসপাতালে আসার পর তার অপারেশন করাতে রাজি হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দিন তার কাছে রক্ত চাই তখন সে দিতে রাজি হয়নি। সে বলছে, আমার অপারেশন করব না। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাব। আপনারা আমাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আমরা তাকে বিদেশে পাঠানোর কিভাবে ব্যবস্থা করব? আমাদের কাছে তো কেউ তাকে নিতে চায়নি। কোন দেশই তাকে নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায়নি।’