প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, মন্ত্রী বলছেন কমছে!

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবেই জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। গত ১৮ বছর ধরেই এ অবস্থা চলে এসেছে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার হার কমছে। ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। এদিকে, খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এই মৌসুমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার কোনও কারণ নেই। এখন বর্ষাকাল। ‘ন্যাচারালি’ এডিস মশা বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৬৫ জন। এ‌র আগের ২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৭৪ জন। গত শনিবার (৩ আগস্ট) ছিল এক হাজার ৬৮১ জন, ২ আগস্ট ছিল ১ হাজার ৬৮৭ জন। আর ১ আগস্ট ছিল এক হাজার ৭২১ জন।

কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, গত ৩১ জুলাই ছিল এক হাজার ৫৭৮ জন, ৩০ জুলাই ছিল এক হাজার ৫৭৩ জন। ২৯ জুলাই ছিল ১ হাজার ৩৭৫ জন। ২৮ জুলাই ছিল এক হাজার ২১৪ জন। গত এক সপ্তাহে কেবল ২ আগস্ট বাদ দিয়ে প্রতিদিনই বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এছাড়া, জুলাইয়ে এ সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮, জুনে ১ হাজার ৮৬৩, মে মাসে ১৯৩, এপ্রিলে ৫৮, মার্চে ১৭, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ এবং জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৩৭।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, গত ৩০ জুলাই ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৫৩৬ জন, ঢাকার ভেতরে ছিল এক হাজার ৩৭ জন। ৩১ জুলাই ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৬১৮ জন, ঢাকার ভেতরে ছিল ৯৬০ জন। ১ আগস্ট ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৫৯০ জন, ঢাকার ভেতরে ছিল এক হাজার ১৩১ জন। ২ আগস্ট ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৭০৭ জন আর ঢাকার ভেতরে ছিল ৯৫৮ জন। ৩ আগস্ট ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৬৮৬ জন, ঢাকার ভেতরে ছিল ৯৯৫ জন। ৪ আগস্ট ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ৮২১ জন আর ঢাকার ভেতরে ছিল ১ হাজার ৫৩ জন। সবশেষ সোমবার (৫ আগস্ট) ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা ৯০৬ জন, ঢাকার ভেতরে ১ হাজার ১৫৯ জন।

ডেঙ্গু রোগীর ক্রমবর্ধমান চিত্রসরকারি হিসাব মতে, এ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৮ জন। এরমধ্যে এপ্রিলে দুই জন, জুন মাসে তিন জন। আর গত জুলাই মাসে ১৩ জন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, যখন দিনে দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।’ সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌরসভার ‘এডিস নিধন ক্র্যাশ’ প্রোগ্রাম উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু না হলেও শুধু সন্দেহের বশেই এখন মানুষ টেস্ট করাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমরা বলতে পারি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে।’

তবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনোভাবেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেনি। কমার তো প্রশ্নই ওঠে না। এখানে শুক্র-শনিবার সাধারণত রোগীরা ভর্তি হয় না হাসপাতালে।’

এভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার সম্ভাবনা কম বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘মশানিধন যদি ‘সাকসেসফুল’ না হয় তাহলে কমবে না। বৃষ্টি হলেই পানি জমবে। তাতে মশার জন্ম হবে। তাহলে আর ডেঙ্গু কমবে কী করে? মশানিধন কার্যক্রম চলছে। যদি ভালো হয় তাহলে ভালো। আর যদি ‘ফেইল’ হয়, তাহলে মুশকিল হবে।’

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ এসেছে ২০০০ সাল থেকে। গত ১৮ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে।’

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়ে তার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।