অবশ্য এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শিক্ষা বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন দাবি করেন, ‘প্রস্তাবনা দেওয়ার মতো লোকবল বিএমডিসির নেই, বিএমডিসির ক্যাপাসিটি নাই।’
গত ২৭ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য দুই বছরের ইন্টার্নশিপের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা করার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটেও রাখা হয়েছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল। তবে দেশজুড়ে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও চিকিৎসক সমাজের বিরোধিতার মুখে ১ সেপ্টেম্বর এ প্রস্তাবনা থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়। খসড়া নীতিমালাটিও ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত ওই খসড়া নীতিমালাতে দুই বছরের মধ্যে প্রথম এক বছর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর দ্বিতীয় বছর সরকার অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন করার কথা বলা ছিল। বর্তমান কারিকুলামে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সের পর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের এক বছর নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হয়।
তবে দুই বছরের ইন্টার্নশিপের প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালার পর শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই অযৌক্তিক নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেতে একজন শিক্ষার্থীর কমপক্ষে সাত বছর দরকার হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে যেখানে বেশির ভাগ জায়গাতেই কোনও কনসালটেন্ট থাকেন না, সেখানে শিক্ষার্থীরা শিখবে কোথা থেকে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘আপাতত’ খসড়া নীতিমালাটি প্রত্যাহার করা হলো বলে লেখা রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এই আপাতত শব্দ মানে এটা একেবারে প্রত্যাহার করা হয়নি, তারা এর পুরোটা বাতিল চান।
উপজেলায় চিকিৎসক নেই, তা পূরণেই ইন্টার্নদের দিয়ে কাজ করানোর চিন্তা থেকেই হয়তো এমন খসড়া নীতিমালা করা হয়েছিল বলে মনে করেন বিএমডিসির একাধিক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার বিএমডিসির। কিন্তু বিএমডিসিতে এ বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে বিএমডিসিকে এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে, কিন্তু তারা এটা করতে পারে না। আমরা বিএমডিসিকে বলেছি এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়কে পাল্টা চিঠি দিতে।
নোটিশ প্রত্যাহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. লালন সিদ্দিকী বলেন, মন্ত্রণালয় যখন পিছু হটে নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তখন এই ‘আপাতত’ শব্দটা ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা করবে না বলে আশা রাখি। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে বিএমডিসিকে বাইপাস করে মন্ত্রণালয় আর এ ধরনের কোনও উদ্যোগ নেবে না।
বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে মতামত জরিপের জন্য খসড়া নীতিমালাটি দিয়েছিল। তবে কাজটাতো তাদের না, এটা সম্পূর্ণ বিএমডিসির কাজ। ইন্টার্নশিপ এক বছর হবে, নাকি দুই বছর অথবা পাঁচ বছর যাই হোক না কেন, এসব বিষয়ে কথা বলবে বিএমডিসি, তাদের এখানে কিছু বলার নেই। তবে বিএমডিসি থেকে আমরা একটি কমিটি করেছি দুই বছর করা যাবে, নাকি যাবে না।
মন্ত্রণালয় এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ কেন করলো জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শিক্ষা বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন দাবি করেন, ‘বিএমডিসির ওই রকম লোকবল নাই, বিএমডিসির ক্যাপাসিটি নেই। বিএমডিসিকে তাদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য আরও লোকবল নিয়োগ দেওয়াসহ সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের কাজ করছি।’
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে খসড়া নীতিমালা ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা আরও যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আবার একটি খসড়া করে বিএমডিসিকে দেবো। তারা এরপর তাদের কর্মপরিধি অনুযায়ী কাজ করবে।