ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ‘ওঠানামা’ করছে

ডেঙ্গু রোগী (ফাইল ছবি)ডেঙ্গু রোগীর আগের দিন বাড়ছে তো পরের দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘মাঝারি নিয়ন্ত্রণ’ বললেও তাতে ‘স্থিতিশীলতা’ থাকছে না। দেশজুড়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মকাণ্ড, ঢাকা সিটির ভেতরে সিটি করপোরেশনের চিরুনি অভিযানে ভেতরেই প্রতিদিন নতুন করে এই রোড়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যদিও সেপ্টেম্বর মাসকে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুর পিক টাইম হিসেবে বলে আসছিলেন। সে হিসেবে রোগী সংখ্যা অপ্রত্যাশিতভাবে না বাড়লেও রোগী সংখ্যা ‘ওঠানামা’র ভেতরে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

কন্ট্রোল রুম জানায়,  বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫০ জন। যা আগের দিনের চেয়ে ১১৬ জন বেশি। তার আগের দিন অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৫৩ জন, ৯ সেপ্টেম্বরে ৭১৬ জন, ৮ সেপ্টেম্বরে  ৭৬১ জন, ৭ সেপ্টেম্বরে ৬০৭ জন, ৫ সেপ্টেম্বরে ৭৮৮ জন এবং ৪ সেপ্টেম্বরে ছিল ৮২০ জন।

সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে এবং এই ধরনের বৃষ্টি এই মশাবাহিত রোগকে বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক শাখা থেকে। তারা জানিয়েছির, এ কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও ‘ওঠানামা’ করবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর আমাদের এরকমই যাচ্ছে। গতকাল নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ছিল ৬৩৪ জন।  আজ আবার সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৫০ জন। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত তাই হয়েছে। আগের দিন বাড়ছে তো পরের দিন  কমছে। আবার পরের দিন বাড়ছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না, সংখ্যটা ‘ওঠানামা’ করছে।’’

ডা আয়শা আক্তার বলেন, ‘স্বস্তির জায়গাটা এই যে, ১২ সেপ্টেম্বর পার হয়ে যাচ্ছে, সংখ্যাটা এখনও এক হাজারের নিচে থাকছে। আবার অন্যভাবেও বলা যায়, সংখ্যাটা আমরা এখনও ৪০০ থেকে ৫০০র ভেতরে আনতে পারিনি।’ যদিও আশঙ্কাটা অনেকখানিই কমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এক হাজারের ভেতরেই এই সংখ্যা  ‘ওঠানামা’ করতে পারে।’’

ডেঙ্গুর রোগীর সাপ্তাহিক তথ্যচার্ট

এদিকে, এক হাজারের নিচে রোগী সংখ্যা থাকলেও থাকলেও এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র এবং  মশাবাহিত রোগের বাহক নির্মূল না করতে পারলে  ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এজন্য কেবল ডেঙ্গুর মৌসুমে নয়, বছরজুড়েই স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মকৌশল হাতে নিয়েছে। এরসঙ্গে এবার স্টেকহোল্ডারের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’

এদিকে, সরকার নেওয়া কার্যক্রমের সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, ‘নুতন করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কোনোদিন কমছে, কোনোদিন বাড়ছে। তবে প্রতিদিন যেভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে আমাদের সন্তুষ্টির কিছু নেই। চলতি মাসে রোগী সংখ্যা আগস্টের তুলনায় কমে এলেও এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হচ্ছে, সেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তাই একে আরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর সেজন্য  কাজ করছি। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে, সাবধাণতা অবলম্বন করতে হবে।’

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগস্টে বেড়েছিল সেখান থেকে অনেক কমে এসেছে, কিন্তু তারপরও গত কয়েকদিনে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে সবকিছু ভাসিয়ে না নিলে কিছুটা আশঙ্কা থেকেই যায়।’

এদিকে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৯৭টি ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। এর মধ্যে থেকে ১০১টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ৬০টি ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে তারা। এই হিসাব অনুযায়ী এপ্রিলে ২ জন, জুনে ৫ জন, জুলাইয়ে ২৮ জন ও আগস্টে ২৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।