যৌনবাহিত ২৭ রোগের তালিকায় ডেঙ্গু!

ডেঙ্গু-১ডেঙ্গুকে এডিস মশাবাহিত রোগ হিসেবে এতদিন বলা হলেও এবার পাওয়া গেলো ‘আতঙ্কিত হওয়ার মতো’ নতুন খবর। চিকিৎসকরা বলছেন, এইচআইভি, জিকা, হেপাটাইটিস-বি-সহ প্রায় ২৭টি ভাইরাস রয়েছে, যেগুলো যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এই তালিকায় এখন ডেঙ্গুও যোগ হলো। এরমধ্যে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে মশাবাহিত ‘জিকা’ সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। একই কারণে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ডেঙ্গুও সংক্রমিত হতে পারে। তাই, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে দেশে এখন পর্যন্ত (১০ নভেম্বর) মোট ৯৭ হাজার ৮০১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ডেঙ্গুতে ২৫১ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৭৯টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুতে ১১২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানের ডেথ রিভিউ কমিটি।

যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রমিত হওয়া প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘২০১৮ সালেও কোরিয়ায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। আর ডেঙ্গুও জিকা ভাইরাসের মতোই একটি ‘ফ্লাভি ভাইরাস’। জিকা যেহেতু যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়, সেহেতু ডেঙ্গু হতে পারে। যদিও সেটি হাজারে হয়তো একটির মতো হতে পারে।’’ তিনি বলেন, ‘আমরা আরও জানতে পেরেছি, ডেঙ্গু রোগীর রক্তদান, ব্রেস্ট ফিডিং, ওরাল সেক্স, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, বোনমেরো প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও ডেঙ্গু সংক্রমিত হতে পারে।’ এ কারণে ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনের নতুন সংস্করণে ‘যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এটি কমন পাওয়া যায়নি, এর জন্য আরও গবেষণা লাগবে। তবে এটি বিরল নাকি নিয়মিত ঘটনা, তা জানার জন্য আরও গবেষণা করতে হবে।’

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘‘মশাবাহিত আরেক রোগ ‘জিকা’ যেহেতু যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়ায়, তাই বিরল হলেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা উচিত। দেখা দরকার এই পরিস্থিতি আসলে কী। কারণ, এডিস মশাবাহিত ভাইরাস ‘জিকা’, ‘চিকুনগুনিয়া’, ‘ডেঙ্গু’, ‘ইয়ালো ফিভার’—এগুলো সবই একই গোত্রীয়।’

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এসব ভাইরাল ডিজিজ সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও ইতালিতে দুটি কেস রয়েছে। সেখানে থাইল্যান্ড থেকে একজন পুরুষ গিয়েছিলেন, তার শুক্রাণুতে ডেঙ্গু ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। আরেকজন নারী, যিনি শ্রীলংকা থেকে গিয়েছিলেন, তিনিও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন।’ তবে এখনও বিষয়টিকে ডেঙ্গু ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনে আনার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।