লকডাউনের বিকল্প কী?

লকডাউনে শপিং মল ও দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে গত রবিবার (২ মে) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ রবিবার বলেছে, ঈদের আগে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান-শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুহার কমে আসার পেছনে লকডাউনের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। তবে একইসঙ্গে ভাবতে হবে জীবিকার কথা, গণমানুষের কথা।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এভাবে সব বন্ধ রেখে মানুষকে বেশিদিন ঘরে আটকে রাখা যাবে না। আবার ঢালাওভাবে সব খুলে দিলে সংক্রমণ আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। সঙ্গে রয়েছে অতি সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউথ আফ্রিকন ও ইউকে ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি। কেউ কেউ বলছেন, ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও বাংলাদেশে চলে এসেছে। এ সব বিবেচনায় লকডাউনে কী করে শিথিলতা এনে সব সমন্বয় করা যায় সে উপায় খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারকে লকডাউন থেকে বের হতে ১০টি সুপারিশ করে একটি এক্সিট প্ল্যান দিয়েছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, লকডাউনের একটা এক্সিট প্ল্যান অবশই থাকা উচিত এবং সেটা হবে ধাপে ধাপে।

তিনি জানান, ‘মানুষ বেশি যায় যেখানে, সেটা দোকানপাট হোক আর অফিস; সেসব এলাকাগুলোকে ভাগ করতে হবে। অতি সংক্রমণশীল, সংক্রমণশীল, মোটামুটি সংক্রমণ, কম সংক্রমণ এবং সংক্রমণ নেই-এভাবে ভাগ করা যায়।’

‘সংক্রমণ এবং কম সংক্রমণ এই দুটো এলাকা আগে খুলে দেওয়া যায়। এরপর মোটামুটি সংক্রমণ, সংক্রমণশীল এবং সবশেষে অতিসংক্রমণ এলাকা খুলে দেওয়ার বিষয় আসতে পারে।’ বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।

‘তবে এক্ষেত্রে সুপার স্প্রেডার যেসব এলাকা যেমন যেমন গণপরিবহন, এটাকে দীর্ঘসময় নিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে হবে। একইভাবে যেকোনও মেলা-খেলা, এসবও বন্ধ রাখতে হবে। ভার্চুয়ালি যেসব অফিস করা যায় সেটা সেভাবেই করতে হবে। অফিসে যেতে হলে অর্ধেক জনবল দিয়ে বাই রোটেশনে কাজ করতে হবে।’

‘যেসব এলাকায় ক্লোজ ভেন্টিলেশন বা সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার রয়েছে, সেখানে বিধিনিষেধ থাকতে হবে। বিনোদন স্পটগুলোর জন্যও এমনটা প্রযোজ্য।’ এসব স্থান অন্তত আরও একমাস বন্ধ রাখা হোক জানিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, তা না হলে এখন লকডাউনে যে সুফল মিলছে সেটা পাওয়া যাবে না।

এদিকে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের কাছে লকডাউন পরবর্তী এক্সিট প্লানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন অতি জরুরি।

 টার্গেট করে ছোট স্থানে লকডাউন

দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন ঠিক হবে না মন্তব্য করে পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, লকডাউন যদি এরপর দিতেও হয়, তবে টার্গেট করে ছোট ছোট জায়গায় দিতে হবে। যেখানে বেশি সংক্রমণ সেখানে দিতে হবে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যদি ঢাকা সিটির কথা ধরি, তবে পুরো ঢাকায়লকডাউন দেওয়ার দরকার নেই। আগেরবার যেমন ওয়ারি বা রাজাবাজারে করা হয়েছিল সেভাবে করতে হবে।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আমাদের জন্য সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু কিছুতেই ৫ এপ্রিলের আগের অবস্থায় ফেরত যাওয়া যাবে না। 

তিনি আরও জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে যে রোগী শনাক্তের হার কমেছে তার পেছনে সরকারের বিধিনিষেধের প্রভাব রয়েছে এবং মানুষের আচরণের পরিবর্তনের কারণেই সংক্রমণ কমেছে।’

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘শপিং মলে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মলগুলো বেশিক্ষণ খোলা রাখলেই ভালো। কম সময় খোলা থাকায় মানুষ বেশি জড়ো হচ্ছে। ইফতারের আগে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ যাচ্ছে। এটা কিন্তু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২৪ ঘণ্টায় (৩০ এপ্রিল থেকে ১ মে) করোনায় নতুন শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৫২ জন। যা গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময় ৬০ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে প্রায় তিন সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল শুক্রবার করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছিল। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক শ’র ওপরে।