আগের সব রেকর্ড ছাড়ানোর শঙ্কা ওমিক্রন সুনামিতে

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ত্রাসের বাইরে নয় বাংলাদেশ। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে, বাড়ছে শনাক্তের হারও। এ ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে দেশে গত দুই বছর ধরে চলা মহামারির আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ মহামারির ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখী চিত্র দেখেছে দেশ। বেশি খারাপ অবস্থা দেখা গেছে গত বছরের জুন, জুলাই ও আগস্টে। ডেল্টার তাণ্ডবে সেসময়ে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী আর সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে সবাই।

আগস্টের শেষ দিকে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে কিছুটা। শনাক্তের হার কমে আসে ১ শতাংশের কাছাকাছি। তবে বছর শেষে নতুন ত্রাসের জন্ম দেয় ওমিক্রন। ডেল্টার চেয়ে পাঁচ-ছয়গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে ওমিক্রন ছড়াতে থাকে বিদ্যুৎগতিতে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী প্রতি তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে নতুন রোগী দ্বিগুণ হচ্ছে। ১৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অশুভ ইঙ্গিত। আমরা যদি নিজেদের সংবরণ না করি, তবে বিপদের বড় আশঙ্কা আছে।’

এ বছরের ১ জানুয়ারি করোনায় ৩৭০ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ জানুয়ারি ৫৫৭, ৩ জানুয়ারি ৬৭৪, ৪ জানুয়ারি ৭৭৫, ৫ জানুয়ারি ৮৯২ ও ৬ জানুয়ারি এক হাজার ১৪০ জন শনাক্ত হয়।

পর্যায়ক্রমে ৭ জানুয়ারি এক হাজার ১৪৬ জন, ৮ জানুয়ারি এক হাজার ১১৬, ৯ জানুয়ারি এক হাজার ৪৯১ ও ১০ জানুয়ারি শনাক্ত দাঁড়ায় দুই হাজার ২৩১ জনে।

এরপর ১১ জানুয়ারি দুই হাজার ৪৫৮, ১২ জানুয়ারি দুই হাজার ৯১৬, ১৩ জানুয়ারি তিন হাজার ৩৫৯, ১৪ জানুয়ারি চার হাজার ৩৭৮, ১৫ জানুয়ারি তিন হাজার ৪৪৭ ও ১৬ জানুয়ারি হয় পাঁচ হাজার ২২২ জন।

১৭ জানুয়ারি ছয় হাজার ৬৭৬ জন, ১৮ জানুয়ারি আট হাজার ৪০৭, ১৯ জানুয়ারি ৯ হাজার ৫০০, ২০ জানুয়ারি ১০ হাজার ছাড়িয়ে ১০ হাজার ৮৮৮ জন ও ২১ জানুয়ারি শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৪৩৪ জন।

২১ তারিখে রোগী শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগে কখনও এত দ্রুত নতুন রোগী বাড়তে দেখা যায়নি জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের সব রেকর্ড এবার ওমিক্রন সুনামিতে ছাড়িয়ে যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এই আশঙ্কাজনক অবস্থায় সরকারি বিধিনিষেধগুলো পালন করা প্রয়োজন।

হাসপাতালেও রোগী বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেড এক তৃতীয়াংশ ভরে গেছে। এভাবে বাড়লে ঢাকার হাসপাতালে আর বেড পাওয়া যাবে না। শহরের সিটি করপোরেশনের ভেতরেই এক হাজার রোগী ভর্তি আছে।

চলতি ওমিক্রন সুনামি কতটা ভোগাবে জানতে চাইলে, আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে নিজের আশঙ্কার কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, রোগী বাড়ছে। বাড়ছে শনাক্তের হারও। নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো গেলে শনাক্তের হার আরও বাড়তো।

‘জানুয়ারি পার হয়ে আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এভাবেই চলবে। ওমিক্রনের কারণে এখন এত দ্রুত রোগী বাড়ছে, যা গত দুই বছরের দেখা যায়নি।’

আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, ‘এখন জ্যামিতিক হারে রোগী বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে সময় নেবে না।’

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন, ওমিক্রন সুনামিতে এবার ভোগাবে আরও।

‘এবার ডেল্টাকে ছাড়িয়ে যাবে দ্রুতই। দিনে ৪০-৬০ হাজার শনাক্ত ছাড়িয়ে গেলেও বিচিত্র কিছু হবে না।’ বলেন ডা. মুশতাক।

ওমিক্রনে জটিলতা কম, ডেল্টার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীও কম জানিয়ে তিনি বলেন, সংক্রমণ বাড়লে আনুপাতিক হারে সেটাও বাড়বে।

ওমিক্রন সুনামি কতদিন চলতে পারে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে সংক্রমণ দ্রুত ওঠে, সেটা আবার দ্রুত নেমেও যায়। আগামী ও তার পরের সপ্তাহে বাড়তে পারে। ফেব্রুয়ারির প্রথম ধাপেও থাকবে। শেষ সপ্তাহ নাগাদ কমে যেতে পারে।’