‘মৃদু’ ওমিক্রন ‘হালকা’ নয়

১৩ জানুয়ারি রাতে জ্বর হয় পাপড়ি রহমানের। সঙ্গে ছিল তীব্র মাথা ও গলা ব্যথা। সেই সঙ্গে মাথা ভারী হয়েও আসে তার। ১৪ জানুয়ারি করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য দেন। পরদিন পজিটিভ শনাক্ত হন। এখনও ভীষণ ক্লান্তি আর অবসাদ ঘিরে আছে তাকে। সেই সঙ্গে শরীরজুড়ে দুর্বলতা।

আজমেরি সুলতানা উর্মি জানালেন, ডিসেম্বরে করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও ঘন ঘন মাথা ব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখছেন। এছাড়াও যে সমস্যায় ভুগছেন সেটা হলো ভুলে যাওয়া।

‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই শুরু হয় অবসাদ। কিচ্ছু ভালো লাগে না। কান্না পায়। রেগে যাই ঘন ঘন। চোখ-মুখ ফুলে গেছে, ওজন বেড়েছে। তবে রক্তচাপ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন, গ্লুকোজের মাত্রা এ সব ঠিক আছে। শুধু মাথার যন্ত্রণাটা যাচ্ছে না।’ বললেন উর্মি।

১ ফেব্রুয়ারি চমন সাবরিনা জানান, ‘মাত্র করোনামুক্ত হলাম। কিন্তু অল্পতেই রেগে যাচ্ছি। মন খারাপও হচ্ছে। অল্পতে হাঁপিয়েও উঠছি। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে মাথা আর চোখ ব্যথা।’

ওমিক্রন নাকি ডেল্টাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেটা নিশ্চিত নন পাপড়ি, উর্মি ও সাবরিনা। তবে এই সময়ে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে মারাত্মক গতিতে। ঘরে ঘরেও করোনা আক্রান্ত রোগী। তাই তাদের ধারণা—হয়তো তারা ওমিক্রনেই আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টায় (৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা) করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫২ জন। ২২ জানুয়ারির পর যা সর্বনিম্ন। ওই দিন ৯ হাজার ৬১৪ জনের শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল অধিদফতর। ২৩ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯০৬ জনে। সেই থেকে সংক্রমণ বাড়ছিল। একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হারের রেকর্ডও হয় ওমিক্রন সুনামিতে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ধরা পড়ার পর বলা হয়েছিল ডেল্টার মতো ওমিক্রন সিভিয়ার নয়। হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে কম, মৃত্যুও কম। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ওমিক্রনকে মৃদু ভাবা ঠিক হচ্ছে না। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে সারা দুনিয়াতেই মানুষ মারা যাচ্ছে।

গত ২৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসির পরিচালক ড. রচেল ওয়ালেনস্কি বলছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গকে ‘মৃদু’ আখ্যায়িত করা বিভ্রান্তিকর।

তিনি বলেন, “এই ‘মৃদু’ মানে ‘হালকা’ নয়। এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে চাপ ফেলেছে এবং প্রতিদিন যে প্রায় ২২০০ মানুষ মারা গেছেন, সেটা অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।”

সিডিসি পরিচালক স্বীকার করছেন, টিকা নেওয়ার ফলে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি ও অনেকের মৃত্যুঝুঁকি কমেছে।

ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকেই ভাবছে ওমিক্রন মৃদু। কিন্তু এর সংক্রমণেও মৃত্যু হচ্ছে। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে অনেকের। তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন ওমিক্রনকে মৃদু বলেছিল তখন এর প্রতিবাদ করেছিলাম’ এমনটা জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বললেন, ‘বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ প্রতিদিন করোনায় শনাক্ত হচ্ছেন। হাজার হাজার মৃত্যু হচ্ছে। ভাইরাসটি অনরবত পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত যে কোনও ভাইরাসই যখন তখন বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।’

‘আবার যারা কোমরবিডিটিতে রয়েছেন—যারা আগে থেকেই ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং ষাটোর্ধ্ব যারা—রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কম, তাদের জন্য যে কোনও সাধারণ ভাইরাসও বিপদজনক হয়ে দেখা দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্যান্ডেমিকের সময় যখন একটা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে, তখন বিপদজনক ঘোষণা করতে এটাই মোর দ্যান ইনাফ। আমরা সেটাই এখন দেখতে পাচ্ছি। ওমিক্রনকে মৃদু ভেবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে উদাসীন হলে চলবে না।’