মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার চিকিৎসায় দেশে সফল অস্ত্রোপচার

ঢাকায় দুই দিনে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার চিকিৎসায় তিনটি সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারগুলো গড়ে ৪৫ বছর বয়সী তিন জন রোগীর ওপর করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন পারকিনসন্স রোগে ও আরেকজন সাধারণ ডাইস্টোনিয়ায় আক্রান্ত।

ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (এনআইএনএস)–এর নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি এবং ভারতের গুরুগ্রাম, দিল্লি-এনসিআর এর মেদান্তা ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী পরিচালক ডা. অনির্বাণ দ্বীপ ব্যানার্জী অস্ত্রোপচারগুলো সম্পন্ন করেন। তাদের সহযোগিতায় ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস–এর একদল নিউরোলজিস্ট।

চিকিৎসকরা জানান, পারকিনসন্স হলো চলার সময় ভারসাম্য রক্ষা সংক্রান্ত এক ধরনের রোগ, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এতে আক্রান্তদের মধ্যে কম্পন, ধীরগতিতে নড়াচড়া, অনমনীয় পেশী ও হাঁটার অসুবিধা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুকোষের ক্রমাগত মৃত্যু ও অবক্ষয়ের কারণে রোগটি হয়।

অন্যদিকে ডাইস্টোনিয়া এক ধরনের মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার। এতে রোগীর পেশীগুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এতে পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়া হয়। এই রোগ শরীরের একটি একক অংশ (ফোকাল ডাইস্টোনিয়া), বা শরীরের দুই বা ততোধিক অংশ (সেগমেন্টাল ডাইস্টোনিয়া), বা সমগ্র শরীরকে (সাধারণ ডাইস্টোনিয়া) প্রভাবিত করতে পারে।

এনআইএনএস–এর নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, থেরাপিগুলো এখন বাংলাদেশে সহজলভ্য এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যেতে হবে না। আমরা ভবিষ্যতে এ অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে আরও বেশি রোগীর উপকার করার ব্যাপারে আশাবাদী।’

ডা. অনির্বাণ দ্বীপ ব্যানার্জী বলেন, ‘ডিবিএস বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক জটিলতার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পদ্ধতিটি পারকিনসন্স ও ডাইস্টোনিয়ার মতো কঠিন রোগগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলোর উপশমে সাহায্য করে।’

ডিবিএস হলো পারকিনসন্স, ডাইস্টোনিয়া ও এসেনশিয়াল ট্রেমোর্স-এর মতো মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার চিকিৎসার একটি প্রমাণিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট এলাকায় ইলেকট্রোড প্রতিস্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে ইলেকট্রিকাল ইমপালস পাঠানো হয়।

বর্তমানে বিশ্বে এক কোটিরও বেশি মানুষ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত। এটাও বলা হয়ে থাকে যে পারকিনসন্স রোগের প্রকোপ বয়সের সঙ্গে বাড়ে। তবে আনুমানিক প্রায় চার শতাংশ মানুষ ৫০ বছর বয়সের আগেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও, নারীদের তুলনায় পুরুষদের পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেড় গুণ বেশি।

চিকিৎসকরা জানান, পারকিনসন্স শনাক্ত করার জন্য এখনও কোনও চূড়ান্ত ডায়গনস্টিক পরীক্ষা নেই। তাই, রোগ নির্ণয়ে প্রধানত ক্লিনিক্যল বিষয়, লক্ষণ, চিকিৎসার ইতিহাস, স্নায়বিক ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করা হয়।