সীতাকুণ্ডে আগুন: এত লোকের চোখ আক্রান্ত হলো কীভাবে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৬৩ জনের চোখ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ছয় জনের চোখের সমস্যা গুরুতর বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। একটি ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষের চোখ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো, আর এর নেপথ্য কারণই বা কী, সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।

সীতাকুণ্ডের ঘটনায় চোখ আক্রান্ত রোগীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে দগ্ধের পাশাপাশি চোখের সমস্যা থাকা রোগীদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে। এখানে বুধবার রাত পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ১৯ জনের ১৫ জনের বেশি রোগীর চোখের সমস্যা রয়েছে। দগ্ধ না হওয়া আরও চার জনের চিকিৎসা চলছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। বাকিরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতালে ভর্তি।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি একাধিক রোগীর স্বজনরা মঙ্গলবার (৭ জুন) জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে চোখ আক্রান্ত হওয়ার পর আহতরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন না। এখন অবস্থার উন্নতি হলেও চোখ লাল হয়ে আছে এবং যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখে আলো পড়লে বা কোনও দিকে তাকালে পানি পড়ছে। সেজন্য কাপড় দিয়ে চোখ ঢেকে রাখতে চাইছেন রোগীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার (৮  জুন) বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন,  তাদের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রায় সবারই চোখে সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি চক্ষু বিশেষজ্ঞরা দেখছেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবশেষ যে ছয় জন রোগী চক্ষু ইনস্টিটিউটে এসেছেন, তাদের অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে দুই জনের চোখের সমস্যার পাশাপাশি দগ্ধ থাকায় এখানে (বার্ন ইনস্টিটিউট) আনা হয়েছে।

চোখের সমস্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেমিক্যাল গ্যাসের জন্য চোখে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর  ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, আগুনে কেমিক্যাল বিস্ফোরিত হলে তা পুড়ে হাইপ্রেসার জোন তৈরি হয়। একটা পার্টিকুলার প্রেসারে চোখ অ্যাডাপ্টেড থাকে। হাইপ্রেসার জোন তৈরি হয়ে চোখে প্রেসার পড়ে ড্যামেজ হয়েছে।

এর ফলে চোখ লাল হওয়ার পাশাপাশি চোখের পাতা জ্বললেও রোগীরা দেখতে পারছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যাদের চোখে সমস্যা রয়েছে, তা রিকভারেবল। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা রোগীদের দেখে জনিয়েছেন, সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে চোখের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সবধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

এর আগে, মঙ্গলবার (৭ জুন) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। সে সময় তিনি বলেছিলেন, কেমিক্যাল ইনজুরির কারণে আহতদের চোখে সমস্যা হয়েছে। তবে কোনধরনের কেমিক্যাল তাদের আক্রান্ত করেছে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকার বেসরকারি এই কনটেইনার ডিপোটিতে গত শনিবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ডিপোর কিছু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। এত পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে এবং আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের লাশ পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।